নওগাঁ প্রতিনিধি: পৌষের শুরুতে নওগাঁ জেলাধীন সীমান্ত ঘেষা সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে পরিযায়ী পাখির আগমন শুরু হয়েছে। বেশ কিছু দিন হল সরকারীভাবে বিলে মাছ শিকার করা বন্ধ ছিল ফলে বিলে জনবলের উপস্থিতিও ছিল কম। তাই বাহির দেশ হতে পরিযায়ী পাখিরা শীত জেঁকে বসতে না বসতেই জবই বিলে আসা শুরু করে দিয়েছে। সারা বিল এখন দেশী বিদেশী পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর সরকারীভাবে মাছ শিকার করার জন্য বিলটি উম্মোক্ত করে দেয়া হয়েছে এতে করে বিলে মানুষের উপস্থিতি ও সমাগম প্রচুর হওয়ায় এই পরিযায়ী পাখির সংখ্য কিছুটা কমে যেতে পারে বলে পাখি প্রেমিকরা মনে করছেন।
সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের জীববৈচিত্রের পটভুমিতে বলা হয়েছে বিলটি সাপাহার উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৩কি.মি পশ্চিমে অবস্থিত, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ বিল। জবই নামক গ্রাম পেরিয়ে এই বিলের অবস্থান তাই লোক মুখে জবই বিল নামে পরিচিতি পেয়েচে এ বিল। প্রকৃতপক্ষে এই বিলের নাম ডুমরইল, বোরা মির্জাপুর, মাহিল ও কালিন্দর চার বিলের সমন্বয়ে এই জবই বিল। বিলের উত্তরে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা দক্ষিনে ভারত ঘেঁষা পূর্ণভবা নদী।
এই বিলের আয়োতন প্রায় ১৫শ হেক্টর ভরা বর্ষা মৌসুমে এর পরিধি বিস্তার লাভ করে প্রায় ২ হাজার হেক্টরে পরিণত হয়। সরকারী হিসেব মতে বিলে খাস জমির পরিমান ৪০৩ হেক্টোর। অতিতে এলাকায় জনবসতি কম থাকায় সারা বছর ধরে বিলটি প্রকৃতিক কচুরীপানা, দল দামে ভরে থাকত। সেময়ে সারা বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরাও বাস করত এই বিলে। কালের বিবর্তনে এলাকায় ঘন জনবসতি গড়ে উঠায় পরবর্তীতে বিলের সকল কচুরীপানাগুলি সরিয়ে মানুষ বিলের নিম্নাংশে চাষাবাদ শুরু করে দেয় ফলে বিলের পাখির উপস্থিতি একেবারে শূন্যের কোঠায় দাড়ায় এবং বিগত কয়েক বছর ধরে বিলটি পাখি শূন্য অবস্থায় পড়ে থাকে।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বিলের নানাময় সম্ভাবনা দেখে ২০১৮ সালের দিকে স্থানীয় কিছু তরুণদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে বিলের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে কাজ শুরু করেন।
তারা প্রথমে উপজেলা প্রশাসন পরে স্থানীয় সাংসদ বর্তমান সরকারের খাদমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশ শুরু করেন। তাদের এ কাজে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহী ও যোগ দিয়ে কাজের গতিবিধি আরোও বৃদ্ধি করেন ও সেবছর হতেই তারা বিলের পাখি শুমারী বা জরিপ কার্যক্রম শুরু করেন।
জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংস্থার লোকজন ও সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানিয়েছেন বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে পাতি-সরালি, লাল ঝুটি-ভুতিহাস, গিরিয়া হাস, তিলি হাঁস, টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস, ঠেঙ্গি হাঁস, চা পাখি, বেগুনী বক, বাজলা বক, শামুখ খোল, মাছ মুরাল, সাপ পাখি, চখা চখি, হরেক রকম হাঁসের সমাহারে সারা বিল ভরে উঠেছে।
তাদের জরিপ মতে গত ২০১৯ সালে এবিলে দেশী বিদেশী মিলে মোট পাখির সংখ্যা ৫হাজার ৫৯৩টি, ২০২০ সালে ৭হাজার ৬৮৩টি এবং ২০২১ সালে ৯ হাজার ৭১২টি। অতিতে এই বিল হতে প্রচুর পাখি শিকার হয়ে থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন ও জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংস্থার হস্তক্ষেপে পাখি শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
ভবিষ্যতে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে মৎস্য শিকারীদের দাপা দাপিতে অনেক পরিযায়ী পাখিরা কিছু দিন বিলে অবস্থান করার পর আবার বিল হতে চলে যায় তাই বৃহত এই বিলের কোন একাংশে পাখিদের জন্য একটি অভয়াশ্রম গড়ে তুললে হয়তো সারা বছরই পাখির কলকাকলিতে বিলটি মুখরিত হয়ে থাকত বলে এলাকার পাখি প্রমিক ও জবই বিল জীববৈচিত্র সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ দাবী করেছেন।
এলাকাবাসী বিলটি পূর্বে অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে একটি পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে সরকারের খাদ্যমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আরবিসি/২০ ডিসেম্বর/ রোজি