আরবিসি ডেস্ক : ফরাসি তারকা এমবাপের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয় নাকি আর্জেন্টাইন তারকা মেসির প্রথম? ফয়সালা রবিবার রাতে। দেখতে দেখতে দোয়ারে উপস্থিত কাঙ্খিত ক্ষণ। সুপার সানডেতে অর্থাৎ আজ রবিবার রাত ৯টায় কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল মহারণ মাঠে গড়াবে।
যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দক্ষিণ আমেরিকার সেরা দল আর্জেন্টিনা ও বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ২২তম বিশ্বকাপের এই ফাইনাল ঘিরে এখন গোটা দুনিয়ায় উত্তাপ বিরাজ করছে। এর মধ্যে আলোচনার নানা দিক ছাপিয়ে সামনে চলে আসছে লাতিনের সঙ্গে ইউরোপের ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এই লড়াইয়ে বাজিমাত করতে মুখিয়ে আছে দুদলই।
ফ্রান্সের সামনে এবার টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ২০ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফরাসিরা। চার বছর আগের সেই সৌরভ এবার মরুর বুকেও ছড়িয়ে চলেছে কোচ দিদিয়ের দেশমের দল। একঝাঁক তারকা ফুটবলার চোটের কারণে খেলতে না পারলেও দাপটের সঙ্গে ফাইনালে উঠে এসেছে ফ্রান্স। এখন তাদের সামনে নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। অন্যদিকে ২০১৪ সালের পর আরেকবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা। এবারও সুপারস্টার লিওনেল মেসির জাদুকরী পারফরমেন্সে ভর করে চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট কেটেছে আলবিলেস্তারা। আট বছর আগের ফাইনালে জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ে ১-০ গোলে হেরে বেদনায় পুড়তে হয়েছিল কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশকে।
এবারসহ সবশেষ তিন বিশ্বকাপের মধ্যে দুইবারই ফাইনালে উঠে আসা আর্জেন্টিনা এবার আর না পাওয়ার বেদনায় কাঁদতে চায়না। সৌদি আরবের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলেও পরের ম্যাচগুলোতে উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ফাইনাল মঞ্চে উঠে এসেছে কোচ লিওনেল স্কালোনির দল। এর ফলে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর আবারও ইউরোপ ও লাতিনের ফাইনাল মহারণ নিশ্চিত হয়েছে। দুটি ফাইনালেই আছে মেসির আর্জেন্টিনা। ইউরোপের প্রতিপক্ষ শুধু বদল হয়েছে। আট বছর আগে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি। ২০২২ সালে ফ্রান্স। ২০১৮ বিশ্বকাপে হয়েছিল অল ইউরোপিয়ান ফাইনাল। এবারসহ বিশ্বকাপ ফাইনালে ১১ বার মুখোমুখি হচ্ছে লাতিন ও ইউরোপ। সবশেষ দ্বৈরথে না পারলেও রোমাঞ্চকর এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে দক্ষিণ আমেরিকাই।
আগের ১০ ফাইনালে লাতিনরা জিতেছে সাতবার; আর ইউরোপ জিতেছে মাত্র তিনবার। লাতিনদের মধ্যে পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল, বাকি দুটি আর্জেন্টিনা। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই দ্বৈরথে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি। একবার ফ্রান্স। অবাক করা বিষয়, দুইবারই আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছিল জার্মানরা। ১৯৫৮ সালে সুইডেনে আয়োজিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো হয় ইউরোপ ও লাতিনের মধ্যে হয় ফাইনাল। সেবার স্বাগতিক সুইডেনকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। মজার বিষয়, সেলেসাওরা তাদের পাঁচটি শিরোপাই জিতেছে ইউরোপের প্রতিপক্ষকে হারিয়ে। এর মধ্যে দুইবার হারিয়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালিকে। আর্জেন্টিনারও দুটি শিরোপা এসেছে ইউরোপের দলকে হারিয়ে। ১৯৭৮ সালে হল্যান্ড ও ১৯৮৬ সালে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। এবার ইউরোপের আরেক প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। তাদের হারিয়ে ৩৬ বছর পর নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে মুখিয়ে আছে আর্জেন্টিনা।
এবার ফ্রান্সের সামনে তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুইবার বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। এর আগে ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮) ও ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২) এই কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অর্থাৎ সবশেষ ১৯৬২ সালে পরপর দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছিল সেলেসাওরা। এরপর কেটে গেছে ৬০ বছর। এর মধ্যে সুযোগ এসেছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। কিন্তু কেউই জিততে পারেনি টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা। এবার সুযোগ থাকছে ফ্রান্সের সামনে। ফাইনালের লড়াইয়ে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারলেই টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়বে ফরাসিরা। তবে শিরোপার লড়াইটা মোটেও সহজ হচ্ছে না দেশম বাহিনীর। কেননা মেসির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপজুড়েই আছে নান্দনিক ছন্দে। মেসি নিজেও আছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ফর্মে। ইতোমধ্যে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ফাইনালই তার বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ।
যে কারণে খুদে জাদুকরের সতীর্থরা দলের প্রাণভোমরাকে যে কোনো মূল্যে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দিতে মুখিয়ে আছেন। আর্জেন্টিনার তারকা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ যেমন বলেছেন, ফাইনালে কেউ এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে কথা বলবে না। ম্যাচটা দুই দলের জন্যই কঠিন হবে। তবে আমরা জানি বিশ্বকাপ ফাইনালের গুরুত্ব কতটা। মেসিকে আমরা খুব ভালোবাসি। এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। আমরা চাই সবাই মিলে নিজেদের সেরাটা দিয়ে অধিনায়কের হাতে বিশ্বকাপ দিতে। এর থেকে বড় ফেয়ারওয়েল হয়তো আর কিছু হতে পারে না। আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনিও মেসিকে সর্বকালের সেরা আখ্যা দিয়ে দিয়ে তাকে সোনার ট্রফি উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমও আর্জেন্টিনাকে সমীহ করছেন। তবে তিনিও মুখিয়ে আছেন টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিততে। এজন্য মেসিকে আটকানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন ফরাসি গ্রেট। তবে সেমিফাইনালে মরক্কোর বিরুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে প্রথম গোল করা মিডফিল্ডার থিও হার্নান্দেজ মেসিকে ভয় পাচ্ছেন না। তার ছাপ কথা, এখন আমরা ফাইনাল নিয়ে ভাবছি। মেসিকে নিয়ে নয়। আমরা তাকে ভয় পাই না। এটা ঠিক আর্জেন্টিনা অসাধারণ এক দল। তবে আমরা নিজেদের শতভাগ উজাড় করে দিতে প্রস্তুত।
আরবিসি/১৭ ডিসেম্বর/ রোজি