রাবি প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদে প্রথমবারের মতো ‘শীত আগমনী উৎসব-১৪২৯’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় কাঁথা সেলাইয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই উৎসবের উদ্বোধন করেন রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর।
চারুকলা অনুষদের সকল শিক্ষার্থী আয়োজিত এই উৎসবের উদ্বোধনীর পূর্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের কলা পাতায় মোড়ানো পিঠার ডালা ও ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় অনুষদের শিক্ষার্থীরা। অতিথি বরণ শেষে অনুষদের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল ও চিরকুট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
এরপরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, শীত আমার কাছে উপভোগেরই বিষয় বলে মনে হয়। বছরের অধিকাংশ সময় আমরা গরমে পার করি। শীত অল্প সময়ের। শীতের মূল আকর্ষণ পিঠা। আমরা সারা বছর তাকিয়ে থাকি চারুকলার পিঠা উৎসবের দিকে। সেই পিঠা আমরা খাবো এবং চারুকলা শিক্ষার্থীদের পিঠা উৎসবের যে ভিন্ন আয়োজন তা উপভোগ করবো।
তিনি আরো বলেন, চারুকলা যে সমস্ত কর্মকাণ্ডে বিগত কয়েক বছর ধরে কৃতিত্ব রেখে চলছে সেটা যেন অব্যাহত থাকে। এসময় তিনি চারুকলা অনুষদকে এমন সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক বলেন, আমাদের বাংলাদেশে শীত অল্প সময়ের দুই থেকে তিন মাস থাকে। এই সময়টাকে সুন্দর করার জন্য আমরা তাকিয়ে থাকি, তাকে বরণ করি, উপভোগ করি। তবে শীত কিন্তু সবার আনন্দের নয়, যাদের ঘর নেই, কাপড় নেই তাদের জন্য কষ্টের। অন্যদিকে ঘর-কাপড় থাকা মানুষদের জন্য শীত আনন্দের। তবে এই আনন্দ আমাদের সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, বসন্তবরণ, পৌষ-পার্বণ, নববর্ষ এই সমস্ত উৎসবগুলো বরাবরই চারুকলা অনুষদ বেশ ঘটা করে আয়োজন করে থাকে। আর এই বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের কোর্সেরও অন্তর্ভূক্ত। তারই ধারাবাহিকতায় অনুষদের শিক্ষার্থীরা এভারের এই আয়োজন করেছে এবং উৎসবে শীতের পুরো আবহটাকে ফুটিয়ে তুলেছে। এসময় তিনি এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম তাহমিদুর রহমানের সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন একই বিভাগের অধ্যাপক বিলকিস বেগম। এছাড়া সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারেক নূর, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুস সোবাহান এবং গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সভাপতি টিএমএম নূরুল মোদ্দাসের চৌধুরী।
আলোচনা সভা শেষে অনুষদের শিক্ষার্থীরা এক আনন্দ র্যালী বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিকেল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনুষদ প্রাঙ্গণে চলে সাংস্কৃতিক আয়োজন।
এদিকে এই উৎসবকে ঘিরে চারুকলা প্রাঙ্গণকে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, চারুকলার প্রধান ফটকের রাস্তাটি রংধনুর আদলে বর্ণিল কাগজে সজ্জিত করা হয়েছে। অনুষদ প্রাঙ্গনের একপাশে রয়েছে পিঠা, বুটিক এবং গহনার ৭টি স্টল। এক জায়গায় বানানো হয়েছে পদ্ম পুকুর। পুকুরে রয়েছে শীতের লাল পদ্ম। আর চারপাশে প্রজ্জ্বলিত রয়েছে মাটির প্রদীপ। পদ্মপুকুরের পাশেই বটগাছে ডানা মেলে উড়ছে কাগজে বানানো অতিথি পাখি। তার একটু পাশে রয়েছে কাগজে বানানো হলুদ সূর্যমুখী। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বানানো হয়েছে ঢেঁকির ডামি। আর পুরো মঞ্চকে সাজানো হয়েছে ট্যাপেস্ট্রি, আর দড়ি দিয়ে। দড়ি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অতিথি পাখি। মঞ্চের সামনে ইজেলে রাখা হয়েছে দুটি ক্যানভাস। যাতে রঙ-তুলি দিয়ে লিখা হয়েছে ‘শীত আগমনী উৎসব-১৪২৯’, ‘আয়োজনে: চারুকলা অনুষদের সকল শিক্ষার্থী’।
উৎসবের বিষয়বস্তু সর্ম্পকে কথা হয় আয়োজকদের সঙ্গে। তারা জানায়, ঢেঁকির ডামির মাধ্যমে তারা বাংলার প্রাচীণ সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। আর শীতের ফুল পদ্ম ও সূর্যমুখী, আর এই সময়ে এদেশে আসে অনেক অতিথি পাখি। এ দেশের শীতের পূর্ণাঙ্গ আবহটাকে ফুটিয়ে তুলতে তারা এবারের উৎসবে এসকল বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছেন।
আরবিসি/১২ ডিসেম্বর/ রোজি