• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন

ব্রাজিলের ভাবনায় শুধুই শিরোপা

Reporter Name / ১০৫ Time View
Update : বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : ব্রাজিলের অভিধানে সাফল্যের সমার্থক শব্দ শিরোপা জয়। দেশটিতে দ্বিতীয় হওয়াকেও ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হয়। তাইতো চলমান কাতার বিশ্বকাপেও সোনার ট্রফি জয়ের একমাত্র লক্ষ্য সেলেসাওদের। হট ফেভারিট হয়ে মরুর বুকে আসা দলটি নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হলেও খেলতে পারেননি হৃদয় জয় করা ফুটবল। এর পর দলের সেরা তারকা নেইমার চোটে পড়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।

অবশেষে নকআউট পর্বে স্বরূপে ফিরেছে ব্রাজিল। চোট কাটিয়ে ফেরা নেইমারকে নিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর রূপকথার ফুটবল উপহার দিয়েছেন রাফিনহা, ভিনিসিয়াস, পাকুয়েটা, রিচার্লিসন, নেইমাররা। সোমবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ যেন সৌন্দর্যের ফুল ফোটান সেলেসাও তারকারা। পেলের দেশের তারকাদের সাম্বা ছন্দে অসহায় আত্মসমপর্ণ করে এশিয়ার সেরা দেশ দক্ষিণ কোরিয়া।

৪-১ গোলের বিশাল জয়ের পর ব্রাজিলের আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়েছে তেমনি দলটি এখন ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয় ছাড়াও আর কিছু ভাবছে না। এ লক্ষ্য পূরণে আর মাত্র তিন জয় প্রয়োজনে কোচ তিতের দলের। এই মিশনে শুক্রবার রাত ৯টায় কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে খেলবে ব্রাজিল। এই ম্যাচ জিতলে সেমিফাইনালের টিকিট পাবেন নেইমাররা।

এরপর বিশ্বকাপ জিততে প্রয়োজন হবে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচে জয়। গ্রুপ পর্বের দুই জয়ে ঠিক গল্পটা জমেনি। সেখানে চিরচেনা সুন্দর ফুটবলের সুরের মূর্ছনা ছিল না। পয়েন্ট পাওয়ার স্বস্তি ছিল, কিন্তু পূর্ণ তৃপ্তি ছিল না। তার ওপর ক্যামেরুনের কাছে হার। সব ভুলে দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে সবই পেয়েছে ক্ষুধার্ত ব্রাজিল। ২০ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর বার্তা ভালোমতোই দিয়েছেন নেইমার-রিচার্লিসনরা। কি অনিন্দ্য সুন্দর ফুটবলই না খেলেছেন তিতের শিষ্যরা।

ম্যাচে সাফল্যের তুলি প্রথমার্ধেই লেখা হয়ে গিয়েছিল বলে নেইমাররা দ্বিতীয়ার্ধে আর মরিয়া হয়ে ওঠেননি। কোচ তিতেও বাকি পথটুকু সাবধানে পেরুতে চেয়েছেন। তার শুরুর ছকে অবশ্য ব্রাজিল অনন্য, অবিশ্বাস্য, ধারাল এবং ভয়ংকর সুন্দর। ভিনিসিয়াসের ভয়ংকর গতি, নেইমারের পায়ের কারিকুরি, গোল না পেলেও রাফিনহার সাঁড়াশি আক্রমণ, রিচার্লিসনের ৯০ দশক স্মরণ করিয়ে দেয়া গোল, পাকুয়েটার লৌহ মানসিকতা, ক্যাসেমিরোর চুপিচুপি নিজেকে নিংড়ে দেয়া। সব যেন এ রাতে একবিন্দুতে মিলে যায়।

অনিন্দ্য সুন্দর এই ব্রাজিলকে নিয়ে আশাবাদী হওয়ায় যায়। ফুটবল প-িতরাও এখন বিশ্ব ফুটবলের এক নম্বর দেশকে বিশ্বকাপ জয়ে সবচেয়ে ফেভারিট হিসেবে মানছেন। এমনকি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসিও এমন কথা বলেছেন। লক্ষ্য পূরণের পথে এখন ব্রাজিলকে পার করতে হবে পরের ধাপ। শেষ আটে রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়েই আপাতত ভাবছে সেলেসাওরা। একই দিন একই স্টেজের আরেক ম্যাচে লড়বে হল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা।

এই দুই ম্যাচের বিজয়ী দল সেমিফাইনালে একে অপরের মুখোমুখি হবে। তবে আপাতত ক্রোয়েটদের নিয়েই ভাবছে ব্রাজিল। দলটির তারকা ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন বলেন, এখন সবার ভাবনায় ক্রোয়েশিয়া। এটা আর্জেন্টিনা ম্যাচের একধাপ আগে। ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে ভাবতেই হবে আমাদের।
এখন পর্যন্ত আসরে তিনটি গোল করে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ স্কোরার রিচার্লিসন। ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারের এই স্ট্রাইকার খুশি নিজের পারফরম্যান্সে। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দারুণ ধারাবাহিক এই তরুণ বলেন, আমি খুবই খুশি। এভাবে আমাকে চালিয়ে যেতে হবে। আরও অনেক গোল করতে হবে। ব্রাজিল শুধু নয় সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার জীবন্ত কিংবদন্তি পেলে এখন অসুস্থ। হাসপাতালের বিছনায় শুয়েই তিনি উত্তরসূরিদের খেলা দেখছেন।

কোরিয়াকে বিদায় করা ম্যাচে নেইমার-পাকুয়েটারা মাঠেই স্মরণ করেছেন কালো মানিককে। তার জন্য বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া সাম্বা ছন্দের প্রতিনিধিরা। তারকা মিডফিল্ডার লুকাস পাকুয়েটা বলেন, আমি পেলেকে বড় একটা আলিঙ্গন পাঠাতে চাই। এই জয়টা তার জন্য। আমি আশা করছি সবকিছু ঠিকঠাক হবে। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। আমরা তার জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।
কোরিয়াকে উড়িয়ে দেয়ার ম্যাচে অনেকগুলো ব্যক্তিগত ও দলীয় রেকর্ড হয়েছে ব্রাজিলের। ২০২২ সালে সবমিলিয়ে ব্রাজিলের হয়ে ১০ গোল করেছেন রিচার্লিসন। এই বছরে দেশের হয়ে অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে যা অন্তত চারটি বেশি। সবমিলিয়ে ব্রাজিলের জার্সিতে সবশেষ ১১ ম্যাচে এ নিয়ে ১৫ গোলে (৮ গোল, ৭ অ্যাসিস্ট) জড়িয়েছে নেইমারের নাম। আর সবশেষ ৬টি গোল তিনি করেছেন পেনাল্টি থেকে। ২৯ মিনিটের মধ্যে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। বিশ্বকাপে এই প্রথম তারা এত কম সময়ের মধ্যে তিন গোল করেছে।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেলেসাওরা কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধেই করেছে ৪ গোল। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে এই কীর্তি গড়েছিল। তৃতীয় ব্রাজিলিয়ান হিসেবে অন্তত তিনটি বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি গড়েছেন নেইমার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২)। কিংবদন্তি পেলে চার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০) ও ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনাল্ডো তিন (১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৬) আসরে গোল করেছেন।
এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিল তাদের তিন গোলরক্ষকসহ স্কোয়াডের ২৬ খেলোয়াড়ের সবাইকে খেলিয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে কোনো দলের সব সদস্যকে খেলানোর ঘটনা এই প্রথম।

আরবিসি/০৭ ডিসেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category