আরবিসি ডেস্ক : জমে ওঠা গ্রুপ-ই থেকে শেষ ষোলোর টিকিট পেল জাপান ও স্পেন। বৃহস্পতিবার গ্রুপ ফয়সালার দ্বৈরথে স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়েছে সূর্যোদ্বয়ের দেশ জাপান। এর আগে প্রথম ম্যাচে জার্মানিকেও সমান ২-১ গোলে হারিয়ে মিশন শুরু করে হাজিমে মরিয়াসুর দল। অর্থাৎ সাবেক দুই চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় দুই জয় ও কোস্টারিকার কাছে একমাত্র হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে নকআউটে নাম লিখিয়ে এশিয়ার প্রতিনিধিরা কাতার বিশ্বকাপে কার্যত নতুন ইতিহাসের জন্ম দিল।
আর এই হার সত্ত্বেও এক জয় ও এক ড্রয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে প্রি-কোয়ার্টারে তাদের সঙ্গী হলো ২০১০-এর চ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশরা। অন্যদিকে কোস্টারিকার বিপক্ষে ৪-২ গোলের বড় জয় সত্ত্বেও স্পেনের হারে কপাল পুড়ল জার্মানির। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোলগড়ে পিছিয়ে থাকায় এবার গ্রুপ পর্বেই শেষ হয়ে গেল চারবারের চ্যাম্পিয়নদের দৌড়।
প্রথমার্ধ যদি হয় স্পেনের তবে দ্বিতীয়ার্ধের গল্পটা কেবলই জাপানিজদের। ৪৮ মিনিটে ১-১এ সমতায় ফেরানো গোলটি করেন উইঙ্গার রিতসু দোয়ান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৫১ মিনিটে সূর্যোদ্বয়ের দেশকে ২-১এ এগিয়ে নেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার আতোমু তানাকা। দ্বিতীয়ার্ধের বাকি সময় প্রাণপণ চেষ্টা করেও আর সমতা ফেরাতে পারেনি স্পেন। এক মাঠে জাপানিদের এই উল্লাসই পুড়িয়েছে আরেক মাঠে বড় জয় পাওয়া জার্মানিকে!
স্প্যানিশদের হয়ে প্রথমার্ধের একমাত্র গোলটি করেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। ম্যাচের শুরুতেই বল দখলে নিজেদের আধিপত্যের জানান দেয় স্পেন। মাত্র ৮ মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু বুসকেটসের শট চলে যায় গোলবারের বাইরে দিয়ে। তবে গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি স্পেনকে। ১১ মিনিটের মাথায় আজপিলইকুয়েতার ক্রস থেকে দারুণ হেড করে দলকে এগিয়ে দেন মোরাতা।
জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৬০ ম্যাচে এটি তার ৩০তম গোল। ম্যাচের বাকিটা সময় বল নিজেদের দখলে রেখে মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণের অনেক চেষ্টা চালায় স্পেন। ২৬ মিনিটে দানি ওলমোর শট বাইরে চলে যায় গোলবার ঘেঁষে। নকআউট পর্বের টিকিট কাটতে প্রথম শর্ত জিততে হবে, দ্বিতীয়ত করতে হবে প্রার্থনা- প্রায় একই সঙ্গে দুই জায়গাতেই জার্মানির জন্য ইতিবাচক ঘটনার শুরু হয়।
গোলের নেশায় প্রথম মিনিট থেকে আক্রমণ শাণানো জার্মানি এগিয়ে যতে পারত দ্বিতীয় মিনিটেই। তবে জামাল মুসিয়ালার জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। পাঁচ মিনিট পর লেয়ন গোরেটস্কার শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। নবম মিনিটে ভালো পজিশন থেকে টমাস মুলারের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বাড়ে হতাশা। পরের মিনিটেই অবশ্য জার্মান শিবিরে যোগ হয় এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ।
ডাভিড রাউমের ক্রসে হেডে গোলটি করেন বায়ার্ন মিউনিখের ফরোয়ার্ড সার্জ জিনাব্রি। প্রথম ১০ মিনিটের মতো অতটা বিধ্বংসী না হলেও আক্রমণ চলতে থাকে জার্মানির। কোস্টারিকা পাল্টা আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও তেতে ওঠা প্রতিপক্ষের সামনে সুবিধা করতে পারছিল না। ৩৬তম মিনিটে মুসিয়ালার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার তিন মিনিট পর জিনাব্রির দূরের পোস্টে নেওয়া শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
গোল আর না মিললেও দাপুটে ফুটবলে নিয়ন্ত্রণ হাতেই থাকে জার্মানির। কিন্তু বিরতির খানিক আগে তাদের যেন মনোসংযোগে একটু বিঘ্ন ঘটে। রক্ষণে দুবার মারাত্মক ভুল করে বসে দলটি। প্রথমবার তো গোল প্রায় খেয়েই যাচ্ছিল; ডিফেন্ডার রড্রিগারের দুর্বলতায় বল ধরে ওয়ান-অন-ওয়ানে শট নেন কেইসার ফুয়ের। কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার।
৫৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে কোস্টারিকাকে ১-১এ সমতায় ফেরান মিডফিল্ডার ইয়েলতসিন তেজেদা। ৭০ মিনিটে ২-১এ এগিয়ে নেন উইঙ্গার জুর্গান ভার্গাস। মরিয়া জার্মানিকে পাল্টা আক্রমণে ৮৩ মিনিটেই ২-২এ সমতায় ফেরান কাই হ্যাভার্ট। ৮৫ মিনিটেই অদম্য জার্মানদের ৩-২এ এগিয়ে দেন তরুণ এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ৮৯ মিনিটে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়ে ব্যবধান ৪-২ করেন ফরোয়ার্ড নিকোলস ফালকার্গ। কিন্তু হতাশাই সঙ্গী হয় শেষ পর্যন্ত। প্রথম ম্যাচে সরাসরি জার্মানিকে হারিয়ে আর এদিন স্পেন বধের কাব্য লিখে তাদের সব শেষ করে দেয় জাপান।
আরবিসি/০২ ডিসেম্বর/ রোজি