স্টাফ রিপোর্টার : বাথরুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে বন্ধুর স্ত্রীর ভিডিও ধারণ করে অর্থ দাবির দায়ে এক যুবককে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৮ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
জরিমানা টাকা আদায় করে তা ভিকটিমকে দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার পৃথক তিনটি ধারায় অভিযুক্ত আসামিকে এই জেল-জরিমানা করা হয়। রাজশাহীর বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালেন বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজামূলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডিত আসামির নাম দেওয়ান আরিফুর রহমান ওরফে আরিফ (৩৮)। তিনি বগুড়া জেলার উপশহর হাউজিং এস্টেট এলাকার মৃত দেওয়ান আক্তারের ছেলে। এই মামলায় জামিন পাওয়ার পর সে দীর্ঘদিন থেকেই পলাতক রয়েছে। তাই তার অনুপস্থিতেই রায় ঘোষণা করেন আদালতের বিচারক।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ইসমত আরা বেগম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২ মে বগুড়া সদর থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। বগুড়ার উপশহর পদ্মা ভবন এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, আসামি আরিফ তার বন্ধু। বন্ধুত্বের সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাসায় ছিলো যাতায়ত। কোনো এক সময় তিনি তার বাথরুমে গোপন ক্যামারা স্থাপন করেন। ওই ক্যামেরায় তার স্ত্রীর গোসলের ভিডিও গোপনে ধারণ করেন। এরপর বাদীর স্ত্রীর ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে তা পাঠিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। বাদীর স্ত্রী লোকলজ্জার ভয়ে তার এক আত্মীয়কে টাকা দেওয়ার নাম করে আরিফকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন।
কিন্তু এরপর বাদীর স্ত্রীর কাছে আবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করেন আরিফ। এতে উপায়ান্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত স্বামীকে (বাদীকে) ঘটনাটি খুলে বলেন। বিষয়টি বাদী জানার পর আসামি আরিফকে তার মুঠোফোন, ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ডিজেবেল করে দেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে নম্বরটি ব্লক করে রাখেন। কিন্তু গেলো বছরের ২৬ মার্চে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে আরিফ আবারও বাদীকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন এবং ধারণকৃত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
পরে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (২০১৮ এর ২২-১, ২৬-১, ২৯-১) তিনটি ধারায় আসামি আরিফের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে তাকে অভিযুক্ত করে আদালতের চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে আসামিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং তৃতীয় ধারায় ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অনাদায়ে পৃথক তিন ধারায় ৬ মাস করে মোট ১৮ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে আসামিকে। এই সাজা একসঙ্গে চলবে বলে জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা।
পিপি ইসমত আরা আরও জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপর তিনটি ধারার অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিকে ওই ধারাগুলো থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ের অনুলিপি বগুড়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আরবিসি/০১ ডিসেম্বর/ রোজি