স্টাফ রিপোর্টার : ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে রাজশাহী জেলার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে রাজশাহী সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন প্রধান অতিথি হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ রাজশাহীতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং শিল্পায়ন নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব, সমস্যা ও সম্ভাবনাবলী তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীতে শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। মতবিনিময় শেষে শিল্পমন্ত্রী রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নকে এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগের কথা জানান।
মতবিনিময় শেষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে আমরা একটা চামড়া শিল্প নগরী করতে চাচ্ছি। প্রক্রিয়াজাত করে যা এখান থেকেই রপ্তানি করা হবে। এখানে এর র-ম্যাটেরিয়ালসটা (মূল উপাদান) সহজলভ্য। গার্মেন্টসের যেগুলো মূল উপাদান যেমন তুলা আমরা বাইরের দেশ থেকে আনি, কিন্তু চামড়া আমাদের নিজস্ব সম্পদ। এটাকে আমরা এখানে থেকে প্রসেস করে বাইরে পাঠানোর পাশপাশি সু-ইন্ডাস্ট্রিজের মতো শিল্পগুলো রাজশাহীতে হতে পারে। এজন্য আমরা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, পিছিয়ে পরা অঞ্চল যেগুলো আছে তাদের কী ভাবে সুবিধাজনক অঞ্চলের সাথে একি মাপে, একি মাত্রায় নিতে পারি সেজন্য আমরা বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) সহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। রাসিক মেয়রের পদক্ষেপে রাজশাহী সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শহরটি টুরিজম শহরের মতো হয়ে গেছে। শুধু টুরিজম বা সুন্দর শহর হলেই হবে না, কাজেই এই অঞ্চলে আমাদের যে সমস্ত ঐতিহ্যগত ব্যবসাবাণিজ্যগুলো ছিল তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করছি। রাজশাহী অঞ্চলে যে সমস্ত র-মেটেরিয়ালস আছে তার ওপর ভিত্তি করেই এই অঞ্চলে শিল্পায়ন সৃষ্টি করা হবে।
রাজশাহীর ভূয়সী প্রশংসা করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, রাজশাহী গ্রীণসিটি , ক্লিনসিটি হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে। এখন রাজশাহীকে কর্মসংস্থান সিটিতে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে সঙ্গে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো।
বর্তমান সরকার কোন শিল্পকারখানা বিক্রি করবে না বা বন্ধ করবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য যে শিল্প আছে যেমন চিনি কল এগুলোকে ডাইভারসিফিকেশন করে নানা রকম উৎপাদনমুখী পণ্য উৎপাদন করা হবে। চিনি কলে আম ও টমেটোকে প্রসেস করে তা বাজারজাত করা যেতে পারে। এর চাহিদা প্রচুর। সরকারের যেসব বন্ধ প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে আমরা চালু করতে চাচ্ছি। এজন্য আমরা দেশি বা বিদেশি উদ্যোক্তাদের সন্ধানে আছি।
দেশের নতুন শিল্পাঞ্চলগুলোতে নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাদিকার দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শিল্পাঞ্চল গুলোতে তাদের জন্য সকল ধরণের সুবিধা দেয়া হবে। তাদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হবে। পাশাপাশি কিছু বৃহত শিল্পের জন্য আমরা বিসিকে জায়াগা করে দেব।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা নদী ডেজিং করে রাজশাহীর পাশেই মালদা-মুর্শিদাবাদের সাথে সুদূর প্রসারী বাণিজ্যিক যোগাযোগ চালু করে এই নৌবন্দরের রুটটাকে ব্যবহার করতে চাই। এতে করে এই অঞ্চলে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি টুরিজম শিল্পেরও প্রসার ঘটবে। এই অঞ্চলের সিল্কের সুনাম রয়েছে। কিন্তু কেন পিছিয়ে গেল তা খতিদে দেখার পাশাপাশি এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মতবিনিময় সভায় শিল্পমন্ত্রীকে রাজশাহীতে শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, ভারতের সাথে রাজশাহীর যে নৈকট্য সেটাকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবো। মালদার ধুলিয়ানের সাথে আমাদের গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জের নৌরুট চালু করা গেলে এই রুটে ব্যবসার বিশাল সম্ভবনা সৃষ্টি হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি রাজশাহীতে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহ অন্যসকল পণ্য আমরা ভারতে রপ্তানি করতে পারবো। এর জন্য শুধু প্রয়োজন রাজশাহী থেকে পাকশী পর্যন্ত পদ্মায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং। এটা সম্ভব হলে স্বল্প ব্যয়ে নদী পথেই সরাসরি রাজশাহী থেকে ঈশ^র্দী হয়ে ঢাকা দিয়ে আরিচা পর্যন্ত পণ্য পরিবহণের সুযোগ হবে।
রাসিক মেয়র আরো বলেন, কৃষি প্রধান রাজশাহী অঞ্চলে কৃষি যন্ত্রাংশ নির্মাণ, রপ্তানিমুখি খেলনা ও কৃষি প্রকৃয়াজত শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান খুবই দরকার।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বিসিকের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মুহ: মাহাবুবর রহমান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, ঐক্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী।
মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক, সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ।
আরবিসি/২৬ নভেম্বর/ রোজি