আরবিসি ডেস্ক : দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি। রবিবার বর্ণিল এবং জাঁকমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমেই পর্দা ওঠে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের। তার আগে শনিবার অংশগ্রহণকারী সর্বশেষ দল হিসেবে কাতারে পা রাখে ব্রাজিল। আর নেইমার-জেসুস-আলভেজদের সেখানে স্বাগত জানান সাম্বা সমর্থকরা। হেক্সা মিশনে তিতের শিষ্যরা কাতার পৌঁছালে সেখানে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার শতাধিক ভক্ত-অনুরাগীরা স্বাগত জানান।
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। যাদের শ্বৈল্পিক ফুটবলে মুগ্ধ গোটা দুনিয়ার ভক্ত-অনুরাগীরা। মূলত, তাদের অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণেই অনেক দেশের ফুটবলপ্রেমীরা পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখেন পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। এমনটা মনে করেন মাদ্রিদে কসমেটিকসের ব্যবসা করা এক ব্রাজিলিয়ান। যার নাম কেলি ডায়াস। যিনি তিন সপ্তাহের জন্য এই মুহূর্তে কাতারে অবস্থান করছেন। এ প্রসঙ্গে ডায়াস বলেন, ‘অন্য দেশের হয়েও কেন ব্রাজিলের প্রতি তাদের সমর্থন? এর কারণ তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল দল।’ ৩৯ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান এ সময় আরও বলেন, ‘আপনি রাস্তাঘাটে খেয়াল করলেই এসব সমর্থকদের উন্মাদনা টের পাবেন। তাছাড়া, ব্রাজিল এবার ফেভারিটের তালিকায়।’
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ এবং আরবের সমর্থকরাই ছিলেন বেশি। নেইমার-রিচার্লিসন-জেসুসদেরকে এক নজরে দেখার জন্য তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন। এদের মধ্যে ২৪ বছর বয়সী লিজো ম্যাথু নেইমারের ভক্ত। তার মতো আরও অনেকেই ব্রাজিলের হলুদ জার্সি পরে উপস্থিত হয়েছিলেন। যাদের পেছনে লেখা ছিল নেইমারের নাম। কিন্তু ইউরোপিয়ান গণমাধ্যম তাদেরকে ‘ফেক’ সমর্থক বলে অভিহিত করে। সেজন্য ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যের সমর্থকরা তো রীতিমতো ক্ষোভ ঝাড়েন ইউরোপের গণমাধ্যমকে। এ প্রসঙ্গে কেরালার হানিফ নামের এক সমর্থক বলেন, ‘কেরালাতে অসংখ্য ব্রাজিলিয়ান সমর্থক রয়েছে। তারা নেইমারকে ভালোবাসে, ব্রাজিলকে সমর্থন করে। কারণ, আপনারা জানেন ভারত ফুটবলে খুব ভালো দল নয়।’ হানিফ দোহায় একটি পাবলিক রিলেশনস ফার্মে কর্মরত। তিনি জানালেন, ২০০২ সাল থেকে ব্রাজিল ফুটবলের প্রেমে পড়েন তিনি। সেবারই সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল সেলেসাওরা। সেইসঙ্গে একমাত্র দল হিসেবে পাঁচবার বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরারও নজির গড়েছিল ব্রাজিল।
এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২০ বছর। কিন্তু এই সময়ে শিরোপার দেখা মেলেনি আর। দুই দশক পর আবারও বিশ্বকাপের আসর বসছে এশিয়ায়। এবার মধ্যপ্রাচের দেশ কাতারে বিশ্বকাপ বলেই আত্মবিশ্বাসটা বেশি ব্রাজিলিয়ান ভক্ত-অনুরাগীদের। এ প্রসঙ্গে বদরুদ্দিন নামের এক অনুসারী বলেন, ‘এটা আমাদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে।’ এবার যে সেলেসাওদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার কিছু কারণও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো নেইমার। গত বছর অক্টোবরেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কাতার বিশ্বকাপের পরই জাতীয় দল থেকে অবসর নিতে পারেন তিনি। তাই সেলেসাওদের জার্সিতে এটাই হতে পারে নেইমারের শেষ বিশ্বকাপ। এ পরিস্থিতিতে ১৯৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলের সঙ্গে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেটা ছিল পেলের শেষ বিশ্বকাপ।
তাঁর পাশে ছিলেন টোস্টাও, জর্জিনিও, গারসন, রিভেলিনো, ক্লদওয়ালদো ও কার্লোস আলবার্তোর মতো তারকা। পেলে যেমন সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মূল খেলোয়াড় ছিলেন, এবার নেইমারও ঠিক তা-ই। ব্রাজিলের খেলায় সাম্বানাচের সেই ছন্দ আর নেই-এ পুরোনো অনুযোগ বা অভিযোগ। এখন আর তা কেউ খ-ন করতে যান না, এমনকি স্বয়ং কোচ তিতেও আর সুন্দর ফুটবলের পূজারী বলতে সর্বস্ব দিতে রাজি নন। ফলই তার কাছে শেষ কথা। ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে গত বছর কোপা আমেরিকা থেকেই ব্রাজিলের খেলায় বিশেষ করে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ ভালো বোঝাপড়া দেখা যাচ্ছে।
২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা আগামী বৃহস্পতিবার সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের মিশন শুরু করবে।
আরবিসি/২১ নভেম্বর/ রোজি