• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকাপ ফুটবল উৎসবে প্রস্তুত কাতার

Reporter Name / ১৩৪ Time View
Update : শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : ‘কাতারের মতো ছোট দেশকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়াটা ছিল বড় ভুল’- বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র দিন দশেক আগে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটার। তাতে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ আয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির চ্যালেঞ্জ যেন আরও বেড়ে গেল! বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে কাতারই প্রথম দেশ যারা কখনোই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন না করেই আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে। ২০১০ সালে ব্ল্যাটার যখন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ চেয়ারে ছিলেন তখনই এই দায়িত্ব পায় কাতার। অভিযোগ আছে, কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পেছনে ফিফার দুর্নীতি মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল।

ব্ল্যাটার এখন বলছেন, তিনি নিজেও কাতারকে ভোট দেননি কিন্তু সে সময়ের ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিসেল প্লাতিনির হাতে থাকা চার ভোটের সব ক’টিই কিনে নেয় কাতার; ফলে আমেরিকাকে ১৪-৮ ভোটে পরাজিত করে আয়োজনের স্বত্ব পায় তারা! তবে এসব অভিযোগে কান না দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রো ডলারে সমৃদ্ধ দেশটি গত এগারো বছরে নিজেদের কাজটাই করে এসেছে। নানা কর্মযজ্ঞ শেষে সফল আয়োজনের চ্যালেঞ্জ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত তারা। আবাসন, যোগাযোগ, প্রযুক্তি সর্বক্ষেত্রে বিশ্ববাসীকে চমকে দিতে চায়।

ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সার্টিফিকেট, ‘আমরা সব সময় বলেছি কাতার এ যাবতকালের সেরা বিশ্বকাপ উপহার দেবে। এই মুহূর্তে দেশটির দিকে তাকালেই তার প্রমাণ পাওয়া পাওয়া যায়। স্টেডিয়ামগুলোকে ঘিরে নির্মাণযজ্ঞ, অনুশীলন মাঠ, মেট্রো, অবকাঠামোÑ সব মিলিয়ে সবাইকে স্বাগত জানাতে কাতার পুরোপুরি প্রস্তুত। পুরো বিশ্ব এখন মাঠের লড়াইয়ের অপেক্ষায়। কাতার প্রস্তুত, বিশ্বকাপের মঞ্চ প্রস্তুত, ফিফাও প্রস্তুত।’ বিশ্বকাপের প্রথম অনুষঙ্গ আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম।

আয়োজনের দায়িত্বি পাওয়ার পরই সংস্কার ও নতুন মিলিয়ে আটটি স্টেডিয়াম এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। কাতারের পাঁচটি শহরের ৮টি দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামে গড়াবে আসন্ন বিশ্বকাপের ৬৪টি ম্যাচ। কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলো সর্বাধুনিক সেরা নিখুঁত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কাতারের তাপমাত্রার কথা বিবেচনায় রেখে স্টেডিয়ামগুলোকেও করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আর পরিবেশবান্ধব। বিশ্বকাপ ঘিরে পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে কাতার। গণপরিবহনের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে ৮টি বাস স্টেশন এবং ৪টি ডিপো নির্মাণ।

১ হাজার ৭০০টির বেশি স্থানে বাস পার্কিং স্থান ছাড়াও ৪টি ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ পার্কিং রয়েছে। পুরো পরিবহন খাতকে পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রিক এনার্জি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো দেশকে একটি সমন্বিত ও টেকসই পরিবহন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। এতে যুক্ত থাকছে দোহা মেট্রো ও লুসাইফ ট্রামস নেটওয়ার্ক, যা উন্নত অবকাঠামোর নিদর্শন। এতে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কাতার একটি ছোট্ট দেশ, সুতরাং বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখো দর্শকের থাকা-খাওয়া আবাসনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। হোটেল, মোটেল, মরুভূমির ঐতিহ্যবাহী তাঁবু ব্যবস্থা, অ্যাপার্টমেন্ট, অভিজাত রেঁস্তরা, ভ্রমণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে উপভোগ্য নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এই মহাযজ্ঞে কাতারে পুরো বিশ্ব থেকে প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে একত্র করার বড় এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য এক লাখ ৭৫ হাজার হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করা হবে। তবে হোটেল মোটেলসহ আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া করতে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এই সংকট নিরসনে বিভিন্ন রকমের উদ্যোগ নিয়েছে কাতার সরকার। আবাসন সংকট দূর করতে কাতারের মরুভূমিতে অস্থায়ী বিলাসবহুল ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে সমর্থকদের জন্য। এ ছাড়াও আবাসন সংকট কমাতে কাতারের বিভিন্ন শহর থেকে দোহায় যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিতে সাশ্রয়ী মূল্যের শাটল ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। তবে কাতারে ভ্রমণকারীদের নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেকেই দুবাইকে ফেভারিট হিসেবে বাছাই করছেন।
ম্যাচের দিনগুলোতে দুবাই থেকে ফ্লাইটে পৌঁছে যাবেন কাতারের দোহায়। এ জন্য বিমান ভাড়াকে সহনীয় রাখতে নতুন নতুন ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে আয়োজকরা। এরপর আছে নিরাপত্তার বিষয়। নজিরবিহীন বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার পসরা সাজিয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করতে প্রস্তুত কাতার সরকার। দর্শনার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আয়োজক দেশটি বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিও করেছে ইতোমধ্যে। ১৩টি দেশের অংশীদারদের সঙ্গে কাতারের নিরাপত্তা বাহিনী সারাদেশে এরই মধ্যে পাঁচ দিনের নিরাপত্তা মহড়া চালিয়েছে।

অপরদিকে বিশ্বকাপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তুরস্ক আগেই ঘোষণা করেছে তারা স্টেডিয়াম এবং হোটেলগুলোকে সুরক্ষিত করতে তিন হাজারো বেশি দাঙ্গা পুলিশ অফিসার পাঠাবে। সেই সঙ্গে ১০০ বিশেষ অপারেশন পুলিশ অফিসার, ৫০ জন বোমা বিশেষজ্ঞ এবং ৮০টি স্নিফার কুকুর দিচ্ছে কাতার বিশ্বকাপে। এ ছাড়াও ফরাসি পার্লামেন্ট টুর্নামেন্টের জন্য উপসাগরীয় রাজ্যে প্রায় ২২০ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করবে। যারা ফরাসি নাগরিকসহ ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কাতার মরক্কোর সঙ্গে একটি নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিও করেছে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন কাতারে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মোতায়েন করবে তারা। পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যুগান্তকারী এক উৎসব হতে যাচ্ছে কাতার। বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকে আসা ফুটবলপ্রেমীদের সুবিধার জন্য ফিফা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে। এগুলোর অধিকাংশই এই প্রথমবারের মতো উপভোগ করতে যাচ্ছে ফুটবল দর্শকরা। মাঠে বলের ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর প্রযুক্তি অনুযায়ী খেলা তদারককারিদের কাছে রিয়ে-টাইম ডেটা পাঠাতে পারবে। এর থ্রিডি অ্যানিমেশন ফুটবলের সংস্পর্শে প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত খেলোয়াড়দের সঠিক অবস্থানের জানান দেবে। প্রয়োজনে তা টেলিভিশন এবং স্টেডিয়ামের বড় মনিটরেও দেখানো হবে।

এবারে ফুটবল বিশ্বকাপ আসরের সবচেয়ে অভিজাত দিকটি হচ্ছে এর ভেন্যুগুলো তথা- স্টেডিয়াম। কাতার এবার ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কতগুলো স্টেডিয়াম পরিবেশন করতে যাচ্ছে। প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের স্থিতিশীল তাপমাত্রা নিশ্চিত করার জন্য ভেন্যুগুলোতে থাকবে উন্নত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। এটি দর্শক এবং খেলোয়াড় উভয়কেই খেলায় দেখা এবং খেলায় অংশ নেয়ার জন্য একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ দেবে। থাকছে ওয়াইফাই ও স্মার্ট চার্জিং স্টেশন। আধা-স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি। পরিধানযোগ্য ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তি। দেশ ঘুরে দেখার অ্যাপ্লিকেশন। ইনডোর নেভিগেশনেও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। সহজে ব্যবহারযোগ্য পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট। স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডারসহ আরও অনেক, অনেক কিছু।

আরবিসি/১৯ নভেম্বর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category