সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো নেতৃত্ব কী আসবে-এমন প্রশ্ন দলের ভিতরে-বাইরে। সম্মেলন ঘিরে দলের সর্বত্রই একই আলোচনা, কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন, কাদের কপাল পুড়ছে!জানা গেছে, দলটির শীর্ষ পদে বা সভানেত্রী হিসেবে ৪২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। সভানেত্রী পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
দলের সিনিয়র একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও এবার বেশকিছু রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম, সম্পাদকমন্ডলীতে এবং সদস্য পদে বড় পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০-৪০ জন নেতা বাদ পড়তে পারেন। নির্বাচনীকালীন পরিস্থিতি সামলানো নেতৃত্ব নিয়ে এবার দলকে ঢেলে সাজাবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই দলে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নন। নেত্রী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের টিম লিডার। টিম লিডার কাকে কোথায় রাখবেন সে সিদ্ধান্ত তাঁর। ’ সম্মেলনে কী পরিমাণ রদবদল হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, ‘সম্মেলন মানেই কিছু পুরনো মুখ বাদ পড়েন। নতুন মুখ যুক্ত হন। এ সম্মেলনেও তাই হবে। কারণ নেত্রীর কাছে সবার তথ্যই আছে। ’ দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি ছিলেন, দেশব্যাপী পরিচিতি রয়েছে এমন নেতাদের এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা পর্যায় থেকেও কাউকে স্থান দেওয়া হতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অতীতে বাদ পড়েছেন এমন কেউ কেউ প্রেসিডিয়াম বা সম্পাদকমন্ডলীতে স্থান পেতে পারেন।
বিগত সম্মেলনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৮তম ও ১৯তম সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সংসদ ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট এবং ২০তম ও ২১তম জাতীয় সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সংসদ করা হয় ৮১ সদস্যের। ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় ২১তম জাতীয় সম্মেলন। ২০১৬ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। ২০১২ সালে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৯তম জাতীয় সম্মেলন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৮তম জাতীয় সম্মেলন। দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে ২৩ জন নতুন মুখ যুক্ত করা হয়। পদ পরিবর্তন কিংবা রদবদল করা হয় ১৬ জন নেতাকে। বাদ দেওয়া হয় ১৬ জনকে। দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন মুখ যুক্ত করা ২৮ জন। পরিবর্তন কিংবা রদবদল করা হয় ২২টি পদে এবং বাদ দেওয়া হয় ২? জন নেতাকে। ১৯তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব যুক্ত করা হয় ১২ জন, পরিবর্তন কিংবা রদবদল করা হয় ১৩টি পদে এবং কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয় সাতজন নেতাকে। ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন মুখ আনা হয় ২০ নেতাকে।
সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৩৪ সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যের মধ্যে ১৩ জন গত চার মেয়াদে প্রায় একই পদে টানা দায়িত্ব পালন করছেন। এ দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক সফলতা ও ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশে এবারের সম্মেলনে পদোন্নতি বা পদচ্যুতি হতে পারে তাদের। বর্তমান কমিটির যারা নিজ নিজ পদে কয়েক মেয়াদ ধরে বহাল রয়েছেন, তাদের কর্মকান্ডের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ চলছে। এদের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে সফল হয়েছেন, তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে আর ব্যর্থদের হবে পদচ্যুতি। এদের মধ্যে কাউকে করা হবে কার্যনির্বাহী সদস্য, আবার বয়স বিবেচনায় কেউ স্থান পেতে পারেন উপদেষ্টা পরিষদে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলের সম্মেলনে সব সময় প্রবীণ-নবীনের সমন্বয় ঘটানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। দলে অপেক্ষাকৃত প্রবীণ যারা, তাদের এবার উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হবে। তাদের স্থলে নিয়ে আসা হবে নবীনদের। ২০০৯ সালের মতো এবারও কার্যনির্বাহীর সদস্য থেকে বয়সে প্রবীণদের প্রেসিডিয়ামে স্থান দেওয়া হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রণ থাকবে। প্রবীণদের ত্যাগ, অভিজ্ঞতা এবং নবীনদের মেধা, তারুণ্য কাজে লাগানো হবে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, উন্নয়ন-সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে যেমন নেতৃত্ব প্রয়োজন তা সম্মেলনের মাধ্যমে উঠে আসবে। ’
আরবিসি/১৮ নভেম্বর / রোজি