• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন

রাবিতে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে স্মরণ

Reporter Name / ৯৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২

রাবি প্রতিনিধি : বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায় রাবি প্রশাসন এবং দর্শন বিভাগসহ অন্যান্য সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন।

পরে এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা। সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বাংলা কথাসাহিত্যে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের অবদানের কথা স্মরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক চলার পথে যে মানবিক যন্ত্রণা পেয়েছেন তা তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে একজন নিগৃহীত মানুষকে মানবিক বাস্তবতায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ এ বাক্যটিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, মনুষ্য সত্ত্বাকে তিনি যে পূর্ণতা দিয়েছেন সেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর যে সাহিত্য প্রতিভা তা বাংলা সাহিত্য জগতে চিরদিন সমাদৃত হয়ে থাকবে। তাঁর প্রতি আমাদের যে আবেগ আছে সেটি মোটেও কাচা নয়, এক গভীর আবেগ। এ আবেগ ধরে রাখতে পারলে আমাদেরই কল্যাণ। তিনি আমাদের গভীরে গেঁথে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাহিত করে আমরা চিরস্মরণীয় করে রাখতে পেরে আমরা গর্বিত। যদিও এতে আমাদের বেদনার উপশম হয় না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক যে বিশাল প্রতিভার অধিকারী ছিলো তা এক স্মরণ অনুষ্ঠানের সীমিত পরিসরে বলে শেষ করা যাবে না। বাংলা কথাসাহিত্যের বরপূত্র হাসান আজিজুল হক যখনই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি তখনই তার বিরুদ্ধে লিখেছেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যে কয়েকজন বাংলা সাহিত্যে ক্ষুরধার লেখনী চর্চা করেছেন তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তাঁর অসাধারণ ভাষাশৈলী, বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করে তুলে ধরা, জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়বস্তু নির্বাচন এসবই তাঁর কর্মকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। তাঁর মৃত্যু আমাদের সাহিত্যঙ্গণে অসীম শুন্যতার সৃষ্টি করেছে। হাসান আজিজুল হককে জানতে ও বুঝতে হলে তাঁর কর্ম নিয়ে নিবিড় গবেষণা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর তাঁর বক্তৃতায় বলেন, অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক শারীরিকভাবে আমাদের মধ্যে নেই, আছেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভাবান মানুষ। তিনি যে জ্ঞান আমাদের মাঝে দিয়েছেন তার জন্য আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মানুষ তাঁর কাছে ঋণী। শিক্ষক হিসেবে তিনি দর্শনের মতো জটিল বিষয়কে সহজ করে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে তুলে ধরেছেন। তাঁর জ্ঞান আমাদের সাহিত্য ও দর্শন চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরা যত বেশি তাঁর কর্ম নিয়ে চর্চা করবো ততই বেশি জানতে পারবো বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সভাপতির বক্তব্যে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ছিলেন প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার অধিকারী এক বহুমাত্রিক কথাসাহিত্যিক। তিনি সবসময় তাঁর সৃজনশীলতা দিয়ে সবধরণের অন্যায়-অবিচার, সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে লিখে গিয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন অমায়িক বন্ধুবৎসল মানুষ, পছন্দ করতেন মানুষের সঙ্গ। নিজ অধ্যাপনার বিষয় দর্শনে ছিল তাঁর অগাধ দখল। দর্শনের মতো একটি বিষয়কেও তিনি তাঁর ভাষার দখল দিয়ে হৃদয়গ্রাহী করে শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদ। সেখানে পরিবারের পক্ষ থেকে হাসান আজিজুল হকের নাতি অনির্বাণ হাসানসহ দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মহেন্দ্রনাথ অধিকারী, ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নূরুল হোসেন চৌধুরী, বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কবি জুলফিকার মতিন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবু বকর, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক প্রমুখ স্মৃতিচারণ করেন।

আরবিসি/১৫ নভেম্বর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category