আরবিসি ডেস্ক: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সময় যত এগিয়ে আসছে কে হচ্ছেন নতুন সাধারণ সম্পাদক এ আলোচনা ততই জোরালো হয়ে উঠছে। জোর আলোচনা রয়েছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আবারও এই দায়িত্বে আসতে পারেন।
আলোচনায় আছে দলটির ৩ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ৪ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে। তবে এই নেতৃত্বের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে সাধারণ সম্পাদকের পদটি। নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন সবার দৃষ্টি সেদিকেই।
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বা সভাপতির পরে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদক। ব্যতিক্রম কোনো ঘটনা না ঘটলে বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আবারও নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন এটি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। কারণ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী শেখ হাসিনাকেই দলের ঐক্যের একমাত্র প্রতীক হিসেবে মনে করেন। শেখ হাসিনার বাইরে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদটিতে অন্য কাউকে তারা ভাবছেন না। তাই এই পদটি নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই বলা চলে। প্রতিবারই কেন্দ্রীয় সম্মেলন এলে আলোচনায় উঠে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটিতে কে আসছেন দায়িত্বে। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একটু আলাদা। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টানা দুইবার এই পদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আগামীতে তিনি সাধারণ সম্পাদক থাকছেন নাকি অন্য কেউ এই পদের দায়িত্ব পাচ্ছেন এটাই গত কয়েক মাস ধরে সম্মেলনের সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আবারও এই পদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে গত কিছুদিন ধরে নেতাকর্মীর মধ্যে আলোচনা জোরালো হয়ে উঠছে।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর এবং ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি পর পর দুইবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দলের নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন ওবায়দুল কাদেরকেই আবারও এই পদের দয়িত্বে আনা হবে। ওই নেতাকর্মীদের অনেকেই এটা চান। যদিও সবকিছু নির্ভর করছে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
তাদের ধারণা, আগামী বছর ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব দেশে পড়তে শুরু করেছে এবং এটা আরো প্রকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই প্রেক্ষাপটে সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ওবায়দুল কাদেরকেই আবারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রাখা হতে পারে।
এরপর সাধারণ সম্পাদক পদে অলোচনায় আছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ৷
গত বারও ড. আব্দুর রাজ্জাক বেশ আলোচনায় ছিলেন ৷ এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে তার নাম অনেক নেতাকর্মীর মুখে শোনা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান এ দুজনের নামও বেশ আলোচিত। গত সম্মেলনেও জাহাঙ্গীর কবির নানক আলোচনায় ছিলেন। ছাত্র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমানের। ছাত্র রাজনীতির পর যুব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন নানক।
আবার চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্য থেকে এবার সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন। সেক্ষেত্রে হাছান মাহমুদকে এ পদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। এই পদে বাহাউদ্দিন নাছিম বেশ আলোচিত। তিনি এক সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মাহবুবউল আলম হানিফ অথবা দীপু মণিও এ পদের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।
তবে সব আলোচনায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কেন্দ্র করে। নেতাকর্মীদের মধ্যে এই পদে যার নামই আলোচনায় আসছে সাথে সাথে ওই ব্যক্তি শেখ হাসিনার কতটুকু আস্থাভাজন সে বিষয়টিও তারা আলোচনায় নিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের মধ্যস্তরের এক নেতা বলেন, সবাই শেখ হাসিনার কর্মী কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের মধ্যে পছন্দ-অপছন্দ ও সমর্থনের বিষয় চলে আসে। তবে এখানে যেহেতু ব্যালটে নির্বাচনের কোনো বিষয় নেই তাই কেউ প্রকাশ্যে প্রার্থীও হয় না। কাউন্সিলররা সভাপতি শেখ হাসিনাকেই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের দায়িত্ব দেন। তিনি যাকে মনোনীত করেন তার নামই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব হয় এবং তিনিই দায়িত্ব পান।
সর্বস্তরের নেতাকর্মী তাকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মেনে নেয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে কাজ করতে হয় সভাপতির নির্দেশে ৷ তিনি যোগ্য মনে করেন তাকেই এই দায়িত্বটি দেন। এছাড়া এবারের সম্মেলনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদে অন্যান্য পদে কিছু পরিবর্তন এবং নতুন মুখ নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে আলোচনা চলছে। সভাপতিমণ্ডলী থেকে কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির কারো কারো পদোন্নতি হয়ে সভাপতিমণ্ডলীতে যেতে পারেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই কিন্তু যারা একসময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। নতুনদের কাউকে কাউকে সম্পাদকমণ্ডলীতেও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে এমন আলোচনা চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরবিসি/১০ নভেম্বর/ রোজি