স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মোঃ গোলাম মোস্তাকিম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় আবাসিক হলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার ও সিসিটিভি বৃদ্ধির দাবি তুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নিহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্য দ্রত উদঘাটনেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে ময়নাতদন্ত না করেই শিক্ষার্থীর লাশ দাফন নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলনে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের সবগুলো আবাসিক হলেই সিসিটিভি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বেশিরভাগ সিসিটিভির অবস্থান হলের ফটকের আশাপাশে। ফলে হলের অধিকাংশ এলাকাই সিসিটিভি আওতার বাহিরে থাকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই সুযোগে হলের ভেতর চুরি, মারধর, নেশাসেবনসহ নানা অপরাধকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। এদিকে শাহরিয়ারের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা এখনও জানতে পারে নি প্রশাসনের কেউ।
তিনি যে বারান্দা থেকে পড়ে গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তার আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর হলের ভেতরেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু। কয়েক দফা তদন্তকারী সংস্থা বদলালেও এখন পর্যন্ত এই হত্যারহস্যের কিনারা হয়নি। এছাড়া হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে আবাসিক হলে বেশ কয়েকবার শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চলতি বছর আগস্টে মতিহার হলের কক্ষে শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে টাকার জন্য ছাত্রলীগ নেতার নির্যাতনের বিষয়টি দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দেয়।
এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পাশাপাশি হলে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি তুলেছেন। এই বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ শামিম হোসেন বলেন, হলের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি আসলেই প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের সম্পদ তো সীমিত। এত সীমিত সম্পদ দিয়ে আসলে প্রতিটি ফ্লোরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা সম্ভব নয়। তারপরও শিক্ষার্থীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
এদিকে ২৩ অক্টোবর রবিবার নগরীর হড়গ্রাম এলাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শাহরিয়ারের লাশ দাফনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। শাহরিয়ার খুন হতে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীই স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই শিক্ষার্থীর (শাহরিয়ার) মৃত্যু আত্মহত্যা, নাকি হত্যা সেটি নিশ্চিত করার জন্য কবর থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করতে হবে। প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এদিকে শাহরিয়ারের মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে হল প্রশাসনকে একটি কমিটি করে তদন্তের নির্দেশ দেয় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সেই কমিটি এখনও কোনো কিছু কিনারা করতে পারেনি। জানতে চাইলে হবিবুর হলের প্রাধ্যক্ষ মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, শাহরিয়ার কীভাবে নিচে পড়ে গেল তা নিয়ে আমরা এখনও দ্বিধায় আছি। একেকজন একেক কথা বলছে। সেখানে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। থাকলে বিষয়টি উদঘাটনে সহজ হত।
আরবিসি/২৪ অক্টোব/ রোজি