রাবি প্রতিনিধি: এমজিএম শাহরিয়ারের চিকিৎসায় কালক্ষেপনে মৃত্যু ও শতাধিক শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (রামেক) ৮ নং ওয়ার্ড ও তার আশপাশের চিকিৎসক, ইন্টার্নী, নার্স, ব্রাদার এবং আনসানদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এই অভিযোগ দায়ের করেন রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ের করা এই লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘গত ১৯ অক্টোবর আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র এমজিএম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার ছাদ হতে নিচে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্সযোগে জরুরী চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় শাহরিয়ারকে সেখানে কোন প্রকার চিকিৎসা প্রদান না করে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত শাহরিয়ারকে চিকিৎসার জন্য আইসিইউ-তে না নিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক ডাকাডাকির পর বিলম্বে চিকিৎসক ও নার্স আহত শাহরিয়ারের নিকটে আসে এবং নানা অযুহাতে চিকিৎসা প্রদানে কালক্ষেপণ করতে থাকে।’
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ‘ফলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়ার পর বিলম্ব ও বিনা চিকিৎসায় শাহরিয়ার মৃত্যুবরণ করে। চিকিৎকেরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে শাহরিয়ারের বাঁচার সম্ভবনা ছিল বলে ছাত্রদের বিশ্বাস। শাহরিয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তার সহপাঠী ও বন্ধুরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছায় এবং কর্তব্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক করুণ শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । ডাক্তার, নার্সদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা এবং তাদের দায়িত্বে ও কর্তব্যে অবহেলাজনিত কারণে শাহরিয়ারের মৃত্যু ঘটায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে।
অভিযোগে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এহেন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। সেই সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড ও তার আশেপাশের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক, ইন্টার্নী, নার্স, ব্রাদার, আনসার ও তাদের উচ্ছৃংখল সহযোগিরা ন্যাক্কারজনকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকার্ত শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে, অকথ্য গালিগালাজ করে এবং আকস্মিকভাবে হামলা চালায়। হামলায় তারা লাঠি এবং শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত ধারালো যন্ত্রসামগ্রী দিয়ে আনুমানিক শতাধিক শিক্ষার্থীকে গুরুতরভাবে আহত করে। আহত শিক্ষার্থীদের অনেককে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র, বারিন্দ মেডিকেলসহ রাজশাহীর অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।’
অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘রামেকর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়য়ের প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরগণ, ছাত্র-উপদেষ্টা, মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষকগণ যথাসাধ্য চেষ্টা করেন কিন্তু হাসপাতালের কিছু উচ্ছৃংখল সহযোগী ও উস্কানীদাতাদের এবং অনেকের দায়িত্বহীন আচরণের জন্য সবকিছু ব্যর্থ হয়ে যায়। রাবি শিক্ষার্থীর এহেন অবহেলাজনিত মর্মান্তিক মৃত্যু এবং আকস্মিক, অনাকাংখিত অমানবিক ও বর্বরচিত হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পক্ষ থেকে একটি মামলা এজাহারভূক্তকরণের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজপাড়া থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার তসলিমা খাতুন বলেন, ‘শনিবার বিকেলে রাবি কর্তৃপক্ষ একটা অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি৷ ওসি স্যার বাইরে আছেন, স্যার আসলে হবে।
আরবিসি/২২ অক্টোবর/ রোজি