• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

মিনিকেট বিতর্কে ব্যবসায়ীরা

Reporter Name / ১১৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি: খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যখন দাবী করলেন ‘মিনিকেট বলে চাল নেই’ তখন মিনিকেট ধান-চাল আছে দাবী করে বিতর্কে জড়ালেন নওগাঁর চাউল কল মালিক ও চাউল ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইচমিল মালিক সমিতি ও নওগাঁ ধান্য চাউল আড়তদার-ব্যবসায়ী সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করেন। ব্যবসায়িদের এ দাবী মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপন্থী হওয়ায় এ নিয়ে ঝড়ও উঠতে পারে সর্বমহলে।

মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁয় ধান্য চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ধান্য চাউল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে বাজারে কমবেশি মিনিকেট চাল আছে। অথচ কখনো কখনো বলা হচ্ছে মিনিকেট নামে কোন ধান নাই।

তিনি দাবী করেন আমদের দেশের নওগাঁ, নাটোর ও কুষ্টিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে মিনিকেট জাতের ধান পাওয়া যায়। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘তাহলে এটি কোন ধান?’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রচার করা হচ্ছে ‘মোটা চাউল চিকন করে মিনিকেট চাল হিসাবে বাজারজাত করা হচ্ছে’। এখন কথাটা বদলে নতুনভাবে বলা হচ্ছে বি.আর-২৮, বি.আর-২৯ জাতের ধানের চাউল সুপার পলিশ করে মিনিকেট চাউল হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে।

কিছুটা ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে সভাপতি নিরোদ বরন সাহা বলেন, আমাদের দেশে মোটা বা অন্য জাতের চাউল বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। মোটা চাউল ও সর্বোৎকৃষ্ট মানে শরু চাউলের (মিনিকেট) বাজার মূল্য পার্থক্য প্রতি কেজি ১৫-১৭ টাকা। বি.আর-২৮ ও বি.আর-২৯ জাতের চাউলের দামের পার্থক্য ৭-১০ টাকা প্রতি কেজি। মোটা চাউল ছাঁটার মাধ্যমে চিকন করে মিনিকেট হিসাবে বাজারজাত করা হচ্ছে এটা বাস্তব নয়।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন মহল ব্যবসায়ীদের উপর দায় চাপিয়ে বলেন, মোটা জাতের চাউল কেটে মিনিকেট করা হয়। কিন্তু দেশ-বিদেশে চাউল কাটা কিংবা সরু করার কোন মেশিন আবিষ্কার হয়নি। এভাবে প্রতিনিয়তই ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।

নিরোদ বরন সাহা চন্দন বলেন, বলা হয় মিল মালিকরা মজুদ করে চাউলের দাম বৃদ্ধি করছে। কিন্তু আপনারা জানেন চাউল উৎপাদনের কাঁচামাল হচ্ছে ধান। ধানের দাম ও আনুষঙ্গিক উৎপাদন মিলিয়ে চাউলের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। ধানের দাম বৃদ্ধি পেলে চাউলের দাম স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এটাই বাস্তবতা। সরকারের পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আমাদের সকলেরই চিন্তা ভাবনা কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের ভাল দাম পাবে।

অপরদিকে চালের দাম সস্তা হবে। আমরা মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা কোন রেশনের দোকান বা দাতব্য খানা খুলি নাই। বর্তমানে চলমান ইরি মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে চালের দামও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এই অবস্থায় খাদ্য বিভাগ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থারসহ নিজস্ব জনবল নিয়োগ করে সারাদেশে মিল মালিক ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। ফলাফলে দেখা যায় দু-একটি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কোথাও কোন বাড়তি মজুদ বা অবৈধ মজুদ পায়নি। যা দিয়ে খোলা বাজারে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তাই চালের দাম উঠানো-নামানোর বিষয়ে বাজার মনিটরিং জোরদারের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেলকন গ্রুপের মালিক আলহাজ্ব বেলাল হোসেন, জেলা অটোমেটিক মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম, মিলমালিক আতাউর রহমান খোকাসহ বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

তবে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা স্পষ্ট করে বলতে চাননি কাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তারা এসব দাবী করলেন। বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন মহল, প্রচার করা হচ্ছে, কিছু ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা ইত্যাদি উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে কৌশলে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।

কিন্তু গত ১৩ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বিএসআরএফ আয়োজিত সংলাপে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে মিনিকেট বলে কোনো চাল নেই। তবু ব্যবসায়ীরা মিনিকেট নামে চাল বাজারজাত করছেন। যাঁরা মিনিকেটের নামে চাল বাজারজাত করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন করা হচ্ছে।

মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত আইনে প্যাকেটের গায়ে ধানের জাতের নাম লেখার কথা বলা হয়েছে। চালের বস্তায় ধানের জাতের নাম উল্লেখ করতে হবে। চালে বেশি পলিশ করা যাবে না।

অন্যদিকে নওগাঁয় ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলনের এসব বক্তব্য মন্ত্রীর তথ্য সন্ধান ও বক্তব্যের বিতর্ক হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি সমালোচনামুখর হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

আরবিসি/১১ অক্টোবর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category