• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২১ অপরাহ্ন

ইউক্রেন জয়ের স্বপ্ন হাতছাড়া পুতিনের?

Reporter Name / ১০৯ Time View
Update : শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : গত সপ্তাহে মস্কোর রেড স্কয়ারে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জোর গলায় বলেছিলেন, ‘সত্য আমাদের পক্ষে এবং সত্যই আমাদের শক্তি!’ ইউক্রেনের দখলকৃত চারটি ভূখণ্ডকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জয় আমাদের হবেই!’।

কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট অবৈধভাবে ভূখণ্ড রাশিয়ায় একীভুত করার ডিক্রিতে স্বাক্ষর করলেও এসব এলাকার কিছু স্থান মুক্ত করে চলেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। হাজারো রুশ নাগরিক বিস্তৃত যুদ্ধে অংশগ্রহণ এড়াতে রাশিয়া ছাড়ছেন। রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি পুতিনের জন্য খুব খারাপ হয়ে পড়েছে এবং অনুগতরাও ইউক্রেনকে ‘নাৎসিমুক্ত করণের’ বিষয়টি নতুনভাবে হাজির করছেন। ইউক্রেনে চলমান সংঘাতকে তারা পুরো সমন্বিত পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।

ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে রিডল রাশিয়ার সম্পাদক আন্তন বারবাশিন বলেন, তিনি অন্ধকারে রয়েছে। মনে হচ্ছে বাস্তবে কী ঘটছে তা সম্পর্কে তার কোনও ধারণা নেই।

তার মতো অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, কিয়েভের পশ্চিমাদের দৃঢ় সমর্থন ও আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাদের লড়াকু প্রতিরোধ পুতিনকে একেবারে অরক্ষিত করে ফেলেছে।

ক্ষমতায় বিশ বছরের বেশি সময় ধরে থাকা পুতিন শুক্রবার ৭০ বছরে পা দিয়েছেন। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার ভুক্তভোগী পুতিন। তার স্বৈরাচারী ধাঁচের শাসনের কারণে বুদ্ধিমত্তা গুরুত্ব পাচ্ছে না।

আর. পলিটিক নামের পর্যালোচনা সংস্থার প্রধান তাতিয়ানা স্টানোভায়া বলেন, তার ধারণাগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। পুতিনের সঙ্গে কাজ করা সবাই জানেন বিশ্ব ও ইউক্রেন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন। তারা জানেন পুতিন কী চান। তার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোনও তথ্য তারা সরবরাহ করতে পারেন না। এভাবেই পুতিনের ব্যবস্থা চলছে।

ক্রেমলিন অনুগতদের সমাবেশে দেওয়া সর্বশেষ ভাষণে পুতিন নিজের নতুন বিশ্ব শৃঙ্খলার ভিশন তুলে ধরেছেন। এতে একটি শক্তিশালী রাশিয়া রয়েছে। যেখানে ভীতু পশ্চিমারা রাশিয়াকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হবে এবং কিয়েভ আবারও মস্কোর অধীনে চলে আসবে। এটি অর্জনের জন্য পুতিন রণক্ষেত্র বেছে নিয়েছেন। পুতিনের এই ভিশন কাল্পনিক মনে হলেও পিছু হটার কোনও ইঙ্গিত নেই।

আন্তন বারবাশিন মনে করেন, ক্রেমলিনের অনেক বড় বড় পরিকল্পনা কাজ দেয়নি এবং মনে হচ্ছে পুতিনের কোনও বিকল্প পরিকল্পনা নেই। তিনি রণক্ষেত্রে সেনা পাঠানো জারি রেখেছেন, তিনি মনে করছেন এতে ইউক্রেনের আরও অগ্রসর হওয়া ঠেকানো যাবে না।

 

রণক্ষেত্রে আরও সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্তটিও চলমান সংঘাতে বড় ধরনের মোড় পরিবর্তন। পুতিন এখনও ইউক্রেনে আক্রমণকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে যাচ্ছেন। যা ছোট ও সংক্ষিপ্ত সামরিক অভিযানের কথা তুলে ধরে।

নিজেদের সরাসরি প্রভাবিত না করা অনেক রুশ নাগরিক এই অভিযান মেনে নিয়েছিলেন, এমনকি সমর্থনও করেছিলেন। কিন্তু রিজার্ভ সেনাদের সমাবেশ অনেকের মত বদলে গেছে এবং ব্যক্তিগত ঝুঁকির মুখোমুখি করেছে।

আঞ্চলিক রাজনীতিকরা সোভিয়েত-ধাঁচের সেনা কোটা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা যত সংখ্যক মানুষকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পথে হাঁটছেন।

আন্তন বারবাশিন বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন। অধিকাংশ রুশ নাগরিকদের যুদ্ধ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে। প্রথম কয়েক মাসে রণক্ষেত্রে নিহতরা ছিলেন তাদের পরিধির বাইরে। কিন্তু সেনা সমাবেশ তা বদলে দিয়েছে। কারণ এখন থেকে নিহতদের কফিন মস্কোতে আসতে শুরু করবে।

ইউক্রেনে বিধ্বস্ত রুশ ট্যাংক। ছবি: রয়টার্সইউক্রেনে বিধ্বস্ত রুশ ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স

সাধারণ মানুষদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ, রণক্ষেত্রে রুশ সেনাবাহিনীর অপমানজনক ব্যর্থতার ফলে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সমালোচনায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন। মুক্তমনারা ইউক্রেনে আক্রমণের সমালোচনার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এমনকি অনেকে চলমান যুদ্ধকে অবৈধ বলছেন। ক্রেমলিনপন্থী মহলেও শব্দটি জায়গা করে নিয়েছে। তীক্ষ্ণ সমালোচনা করা হচ্ছে রুশ সামরিক নেতৃত্বের।

রুশ এমপি আন্দ্রেই কারতাপলভ এই সপ্তাহে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছেন রুশদের কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে মিথ্যাচার বন্ধ করতে। কারণ রুশ বোকা নয়।

জোসেফ স্ট্যালিনের চর্চা ভিতু ও অযোগ্য জেনারেলদের ফাঁসি দেওয়ার রীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আরটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্পাদক মারগারিটা সিমোনিয়ান।

অবশ্য এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেননি ক্রেমলিনপন্থীরা। পুতিনের বিরুদ্ধেও কোনও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে না।

তাতিয়ানা স্টানোভায়া ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন সময়েও কোনও যুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন নেই। এমনকি যারা সেনা সমাবেশের বিরুদ্ধে তারা পালাচ্ছেন ও লুকাচ্ছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিরোধের কোনও চেষ্টা দেখছি না।

তিনি মনে করেন, রাশিয়ার ব্যর্থতা অব্যাহত থাকলে এই পরিস্থিতি বদলে যাবেন। এমনটি যাতে না ঘটে সেজন্য অবশ্যই পুতিনকে জয় উপহার দিতে হবে।

পশ্চিমাদের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ?

এই সপ্তাহে একীভুত করা ভূখণ্ড স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করে পুতিন নিজেই পরিস্থিতি যে জটিল তা একভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে এই ব্যর্থতার জন্য ইউক্রেনে সমন্বিত পশ্চিমা উদ্যোগকে দায়ী করার বড় ধরনের প্রচেষ্টা দৃশ্যমান।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের উপস্থাপকরা ইউক্রেনের ভূমি দখলকে আরও বড় কিছু হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। যাতে করে লড়াইয়ের জন্য জাতিকে উৎসাহিত করা যায়।

ভ্লাদিমির সলোভিয়োব দর্শকদের এই সপ্তাহে বলেছেন, এটি সর্বাত্মক শয়তানবাদের আমাদের লড়াই ছাড়া কিছু না। এটি ইউক্রেনের বিষয় নয়। পশ্চিমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। রাশিয়ার শাসক পরিবর্তন ও বিচ্ছিন্ন করা, যাতে করে রাশিয়ার অস্তিত্ব না থাকে।

এই ‘সত্য’কে বিশ্বাস করেন পুতিন। এই কারণে রাশিয়ার দুর্বলতার মুহূর্তে এটি ঝুঁকি তৈরি করছে।

তাতিয়ানা স্টানোভায়া বলেন, এই যুদ্ধ রাশিয়ার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে পুতিনকে জয় পেতে হবে। তার রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। আমি মনে করি সংঘাতের এক পর্যায়ে কিছু মাত্রায় পারমাণবিক উত্তেজনায় ইউক্রেন থেকে পশ্চিমারা পিছু হটবে বলে মনে করছেন পুতিন।

এমনটি মনে করার মতো লোকের সংখ্যা কম না। আন্তন বারবাশিন বলেন, এটিই পুতিন বিশ্বাস করেন বলে মনে হচ্ছে। রুশ সাম্রাজ্যের শেষ প্রতিরোধ পশ্চিমাদের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ।

আরবিসি/০৭ অক্টোবর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category