• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক পাকিস্তানি চিনি, আলুসহ শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে এলো সেই জাহাজ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন রাজশাহীর চারঘাটে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ সার সঙ্কটে রাজশাহীতে ব্যাহত হচ্ছে আলুচাষ, দামও অতিরিক্ত রাজশাহীতে ফের বাস ও সিএনজি চালকের সংঘর্ষ, দুই পক্ষের মীমাংসা স্থগিত কিডনি রোগীর চিকিৎসা আর আইফোন কিনতে ডাকাতির চেষ্টা: পুলিশ তনুর গ্রাফিতিতে পোস্টার সাঁটানো নিয়ে যা বললেন মেহজাবীন স্বৈরাচারের পতন হলেও এখনো গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়নি: নজরুল টিউলিপের বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

আসাফের ছবিতে বাংলাকে দেখছে বিশ্ব

Reporter Name / ৪২৭ Time View
Update : বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২

জয়পুরহাট প্রতিনিধি : নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনের জন্য বাংলাদেশের আলোকচিত্রী আসাফ উদ দৌলার ২৫টি ছবি নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে “ইমোশন টু জেনারেট চেঞ্জ” শিরোনামে একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয় যা ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান ছিল।

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ প্রায় ৫০০ জনের উপস্থিতিতে এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। ইতালির বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর ও লেখক লিয়া বেলত্রামি প্রদর্শনীর কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরের সেই ছোট্ট পল্লী গ্রাম শান্তা থেকে নিউইয়র্কে বিশ্ব নেতাদের সামনে আলোকচিত্রে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড়ানোর কাজটি করেছেন তরুণ ফটোগ্রাফার আসাফ উদ দৌলা। এই ফটোগ্রাফারের ছবিতে স্থান পেয়েছে সুজলা সুফলা বাংলাদেশের চিরায়ত রূপ। তার ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন দিক। আবহমান বাংলার মাটি ও মানুষের ছবি আসাফ যে ভাবে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরেছেন তা নি:সন্দেহে বাংলাদেশের গর্বের বিষয়। সেপ্টেম্বরে পুরো সময়টা ইউরোপ-আমেরিকায় একসাথে স্বদর্পে আলোকচিত্রে বাংলার চিরচরিত রুপ-মহিমা প্রকাশে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তিনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনের প্রদর্শনীতে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেননি তরুণ আলোকচিত্রী আসাফ উদ দৌলা কারণ তখন তিনি ইউরোপের মাটিতে লাল-সবুজের পতাকা হাতে স্বগৌরবে একের পর এক আলোকচিত্রে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছেন দি রিলিজিয়ন টুডে ফিল্ম ফ্যাস্টিভালের ২৫তম আসরে।

এবারের এই আসরে বিশ্বের মোট ২৫টি দেশ অংশগ্রহণ করে। সেই ২৫টি দেশের মানুষের সামনে নিজের দেশের রুপ-রং, মাটি ও মানুষকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করেন তিনি। আলোকচিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি দিনব্যাপি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অতিথি ও অন্যান্যদের জন্য ” ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি প্রোডাকশন বিষয়ে কর্মশালাও পরিচালনা করেন এই গুণী আলোকচিত্রী। ফ্যাস্টিভ্যালের ২৫তম আসরে ইতালির পিনে (১৪-২০ সেপ্টেম্বর) ও ত্রেন্তোতে (১৭-২৫ সেপ্টেম্বর) দুইটি একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় তার। পাশাপাশি ইতালির কার্পিতে ফ্যাস্টিভ্যাল ফর ফিলোসফি তে ১৪-২২ সেপ্টেম্বর মেয়াদে আরো একটি একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এইসব প্রদর্শনীতে ছবির মাধ্যমে বাংলার প্রকৃতি এবং আমাদের প্রকৃতি যে প্রেমের শব্দে পরিপূর্ণ এমন একটি থিমকে উপস্থাপন করেছেন এই তরুণ ফটোগ্রাফার। সেইসাথে বাংলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও তুলে ধরেছেন তাঁর শৌল্পিক ছবিগুলোতে।

গত বছর অক্টোবরে কোপ-২৬ উপলক্ষ্যে “ইমোশন টু জেনারেট চেঞ্জ” শিরোনামে একটি একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে শুরু হয় যা ৩১ অক্টোবরে স্বয়ং পোপ উদ্বোধন করেন। যেখানে তার ৪০ টি ছবি প্রদর্শিত হয় এবং প্রদর্শনীটি ০৫ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত চলমান ছিল। পোপ তার উদ্বোধণী বক্তব্যে বলেন যাও, তোমরা বাংলাদেশের তরুণ ফটোগ্রাফার আসাফ উদ দৌলার ছবি দেখো। এরপর এটি সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এর ধাবাহিকতায় ইতালির রোমের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬-২৫ নভেম্বর ২০২১ একটি একক প্রদর্শনী করেন।

পরবর্তীতে সুইজারল্যান্ড এর দাভোসে ২২-২৯ মে মেয়াদে ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এর বার্ষিক সভা-২০২২ আসফের আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয় । এর আগে গত ১৬ মে ইউরোপের ২য় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র মোনাকো এর ১৬তম মোনাকো চ্যারিটি ফিল্ম ফ্যাসটিভ্যালে একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০১৮ সালে রিলিজিয়ন ট্যুডে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজনে ৩৩টি ছবি নিয়ে ইতালির ত্রেন্তো শহরে করেন তার ১ম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সে বছর তিনি বর্ষ সেরা আলোকচিত্রীর সুনাম অর্জন করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে আগোরা “ওয়ার্ল্ড বেস্ট ফটো” বিশ্বের সেরা আলোকচিত্র: গ্রিন হিরো ২০২০ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। আসাফ উদ দৌলা জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার শান্তা গ্রামের বাসিন্দা।

তিনি ২০০৮ সালে তার মামার দেওয়া ১.৩ মেগা পিক্সেলের একটি মোবাইল ফোন হাতে পান। সেই ফোন দিয়ে তিনি প্রথম ছবি তুলতে শুরু করেন। তখন যা ভালো লাগে, তাই তুলতেন। তখনো তিনি জানতেন না ইমেজ এবং ফটোগ্রাফের মানে। ২০১২ তে প্রথম সেমি এস এল আর ক্যামেরা কেনার পর শুরু হয় অনলাইনে পড়াশোনা, বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করা, সিনিয়র ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শেখা। তিনি কাজাকিস্তান এক্সপো ২০১৭, সেখানেও তিনি তিন মাসব্যাপী তার ছবি প্রদর্শনী করেন একমাত্র এশিয়ান হিসেবে। তিনি দেশে প্রচুর যৌথ প্রদর্শনীসহ, বিভিন্ন দেশে তার ছবি প্রদর্শিত করেন এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন, জিও এশিয়া-¯েপন ম্যাগাজিন সহ বিভিন্ন দেশে তার ছবির ফিচার প্রকাশ করেছেন।

পরে তিনি ২০১৪ সাল থেকে শুরু করেন ছবির প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। তার পর একের পর এক পেয়েছেন অ্যাওয়ার্ড, বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন বাংলাদেশকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত মিলান এক্সপো ২০১৫ তে একমাত্র এশিয়ান হিসেবে তার ছবি ছয় মাস ধরে প্রদর্শিত হয়। তিনি গত ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ইতালির ত্রেন্তো শহরে যান ২১তম রিলিজিওন টুডে ফিল্ম ফেস্টিভাল ২০১৮ তে যোগদান করতে। সেই আসরে ফেস্টিভ্যালের পোস্টারতৈরি হয়েছিল আসাফের ছবি দিয়ে যা অনেক গর্বের বিষয়। সেখানে ১২ দিনব্যাপী তার তোলা অসম্ভব সুন্দর ৩৩টি ছবি দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন “¯িপরিট অফ ফেইথ” নামক একক প্রদর্শনীর মাধ্যেমে। সেখানে তিনি ফটোগ্রাফি এবং ফিল্ম মেকিং নিয়ে ১০ দিনব্যাপী একটি ওয়ার্কশপ করেন ত্রেন্তো ফিল্ম কমিশন এবং ত্রেন্তো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সেখানে ফটোগ্রাফার অফ দি ইয়ার ২০১৮ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। ২০১৯ সালে তিনি আবার লাল-সবুজের বাহক হয়ে যোগদান করেন নেপালের সপ্তম হিউমান রাইটস ফিল্ম ফেস্টিভালে এবং সেখানে তিনি তার ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য।

২০২০ সালের শুরুতে ভারতের অরুণাচলে বাটারফ্লাই ফেস্টিভালে ও তার একটি একক প্রদর্শনী করেন এবং হলিউডের একটি ওয়েব সিরিজের নির্মাতা সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি একাধিক বার আমন্ত্রিত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টর, ¯িপকার হিসেবে। তার মধ্যে অন্যতম- ইতালির ম্যারি কুরি, ভারতের ফাইন আর্টস একাডেমিসহ বাংলাদেশের অনেক কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এবং তিনি বিচারক হিসেবেও কাজ করছেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। তিনি সব সময় চেয়েছেন নতুন প্রজন্ম যেনো খারাপ নেশায় আসক্ত না হয়ে আলোকচিত্রের মতো একটা সুস্থ নেশায় আসক্ত হয় এবং নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারে। এ লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আয়োজন করেছেন অনেক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ছবি প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতা। সেখানে তিনি তুলে এনেছেন তরুণ অনেক মেধাবী প্রতিভা। তিনি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “জয়পুরহাট ফটোগ্রাফিক গ্রুপ”। তিনি জয়পুরহাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে এনেছেন প্রচুর মেধাবী আলোকচিত্রী। তিনি প্রতি ঈদের সময় জয়পুরহাটের আলোকচিত্রীদের নিয়ে বড় বড় ওয়ার্কশপ করান, তাদের নিয়ে ফিল্ড ওয়ার্ক করেন, তাদের নিয়ে ফটো টক, ফটো ওয়াক, ফটো আড্ডার ব্যবস্থা করেন। ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আসাফ শুধু নিজের ক্যারিয়ারই গড়ে তোলেননি, আধুনিক বিশ্বে ফটোগ্রাফিকে যে সৃজনশীল একটি পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া সম্ভব, সেটি চিন্তা করে তিনি নিজ জেলায় প্রতিষ্ঠা করেন জয়পুরহাট ফটোগ্রাফিক গ্রুপ। যেখানে অন্তত ১২০ জন শিক্ষার্থী শিখছেন ফটোগ্রাফির নানা কৌশল। একটা সময় তিনি যখন ২০ জন ফটোগ্রাফার খুঁজে পাননি পুরো জয়পুরহাট জেলায়, সেখানে তিনি তার সর্বশেষ ওয়ার্কশপ করেন জয়পুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে, যেখানে ১২০ জনেরও বেশি আলোকচিত্রী অংশ নেন। এছাড়া তিনি জয়পুরহাটে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। তরুণ মেধাবীদের পুরস্কৃত করেন এবং জয়পুরহাটের সম্মানিত প্রবীণ আলোকচিত্রীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।আসাফ লেখাপড়া করেছেন ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে।

বর্তমানে তিনি বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত আছেন। আসাফ উদ দৌলা বলেন, বাংলাদেশের এত সামান্য একজন ফটোগ্রাফারের ছবি বিশ্বের এত বড় বড় মানুষ দেখছেন সে আনন্দ ও গৌরবে আমার মন ভরে যাচ্ছে। এগুলো আমার প্রিয় সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রিয় জন্মভূমির জলবায়ু পরিবর্তনসহ মাটি ও মানুষের হাস্যোজ্জ্বল জীবনের ৪০টি ছবি। সবাই বাংলাদেশের নাম জানছে এবং সে ছবিগুলো দেখে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশকে নতুন করে চিনছে। বাংলাদেশ একটি সুখী, সুন্দর ও সম্ভাবনাময় দেশ। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা সারা পৃথিবীর মধ্যে তুলে ধরতে পেরে একজন বাংলাদেশি হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। একজন ক্ষুদে ফটোগ্রাফার হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার প্রিয় বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরেছি সেইসাথে দি রিলিজিয়ন টুডে ফিল্ম ফেষ্টিভ্যালে ২৫ টি দেশের মানুষের সামনে নিজের দেশের রুপ-মহিমা প্রকাশ করতে পারাটা আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীর পৃথিবীকে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তার কিছু প্রতিচ্ছবি লেন্স বন্দী করার চেষ্টা করছি যা আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

আরবিসি/০৫ অক্টোবর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category