স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে এক পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সোহাগ মাহমুদ বাপ্পী ওরফে রনি নামের এক ব্যক্তিকে দুইটি ধারায় ৫ বছর করে মোট ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রবিবার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আসামিকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে মোট ১২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগ মাহমুদ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা। মামলার তদন্তকালে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে তিনি পলাতক।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, দুটি ধারার সাজা পৃথকভাবে কার্যকর হবে। আসামির হাজতবাস মূল কারাদণ্ড থেকে বাদ যাবে। পলাতক থাকায় তাঁর গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে সাজা কার্যকর হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর বগুড়া পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল রবিউল ইসলাম মামলাটি করেন। তাঁর বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায়। মামলার এজাহারে তিনি কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেননি। পুলিশের তদন্তে সোহাগ মাহমুদ ধরা পড়েন। তিনি মোবাইল বগুড়ার পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে কনস্টেবল রবিউলের কাছ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া পুলিশ লাইনসে কর্মরত তৎকালীন পরিদর্শক (আরআই) জয়নাল আবেদীন ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রবিউলকে একটি ফোন নম্বর ধরিয়ে দিয়ে বগুড়া সদর থানার আকবরিয়া হোটেলের সামনে গিয়ে কথা বলতে বলেন। পথে সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) নাজমুল হোসেনও তাঁকে দ্রুত ওই ফোন নম্বরে কথা বলতে বলেন।
তিনি ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে সাতমাথা এলাকার কোনো দোকানে রকেটের ব্যক্তিগত হিসাব আছে কি না, দেখতে বলেন। সপ্তপদী মার্কেটের একটি দোকানে রকেট হিসাব আছে জানানোর পর ফোনটি দোকানিকে দিতে বলেন। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে দোকানিকে টাকা পাঠানোর বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয়।
তখন দোকানি রবিউলকে বলেন, ‘পুলিশ সুপার স্যারের আত্মীয় অসুস্থ, তাই টাকা পাঠাতে বলছেন। পরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে স্যারের লোক এখানে আসবেন।’ এরপর দোকানির রকেট হিসাব থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু পরে কেউ টাকা নিয়ে আসেননি। ফোন নম্বরটিও বন্ধ হয়ে যায়।
মামলার বাদী রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আছেন। মামলার রায়ের কথা তিনি শোনেননি। আরআই জয়নাল ও এএসআই নাজমুল ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রতারক তাঁদের সঙ্গেও পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে কথা বলেছিলেন। টাকা পাঠানোর কিছুক্ষণ পর জয়নাল ঘটনাটি বুঝতে পেরে ফোন দিয়ে টাকা পাঠাতে নিষেধ করেন। ততক্ষণে টাকা নিয়ে প্রতারক ফোন বন্ধ করে দেন।
আদালতের রায়ে সোহাগ মাহমুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর ২৩(১)/ ২৪(১) ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৪(২) ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একটি ধারায় সাজা শেষ হওয়ার পর অন্য ধারার সাজা কার্যকর হবে।
আরবিসি/০২ অক্টোবর/ রোজি