আরবিসি ডেস্ক : সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। বাজারও সয়লাব ইলিশ মাছে, কিন্তু দামে কোনো কমতি নেই। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই দিনে কেজিপ্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা।
এই অবস্থায় শুধু ইলিশের চেহারা দেখেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে ক্রেতা সাধারণকে। তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়তি থাকার বিষয়টা ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেলগেট মাছ বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
স্ত্রী-সন্তানদের আবদার মেটাতে বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান সাজু। অন্য দিনের তুলনায় ইলিশের বাড়তি দাম দেখে অনেকটাই হতাশ হয়েছেন তিনি।
দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাজু বলেন, আজ মাছের দাম অনেক বেশি। কারওয়ান বাজারেও এত দাম, কল্পনা করতে পারিনি। গতকালও খিলগাঁও মাছের বাজারে গিয়েছিলাম সেখানেও এত দাম ছিল না। কিন্তু বড় বাজার হিসেবে কাওরানবাজারে মাছ কিনতে এসে অনেকটাই নিরাশ। অনেকক্ষণ ঘুরলাম, কিন্তু মাছ কিনতে পারলাম না।
তিনি বলেন, ভেবেছিলাম ইলিশ কিনে কাঁচা বাজারে যাব, কিন্তু ইলিশই তো কিনতে পারলাম না। আর কাঁচা বাজারে গিয়ে কী হবে! হঠাৎ করেই দাম কেন বেড়েছে সেই কারণও তারা বলছে না। তাদের সোজা উত্তর, নিলে নেন, না নিলে হাঁটেন।
ইলিশের বাজার দর সম্পর্কে কথা হয় মোহাম্মদ মুমিন নামক আরেক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ইলিশের দাম আজকে এতো বেশি যে আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। দুইদিন আগেও বাজারে এসেছিলাম, এত দাম ছিল না। আজ মনে হচ্ছে কেজিপ্রতি দুই-আড়াইশ টাকা বেশি।
তিনি বলেন, খবরে দেখি নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু বাজারে তো সেই চিত্র নেই। এভাবে নিজেদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়ালে হয় না। দামটা অবশ্যই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা উচিত।
এদিকে দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁদপুর-বরিশাল এলাকার নদীগুলোতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। সেখান থেকে ইলিশ সরাসরি আমাদের কাছে আসেও না। আড়তদাররাও যদি সরাসরি ইলিশ কিনতে পারত, তাহলে দাম অনেকটা কমে আসত। কিন্তু আড়তদারের ওপর আড়তদার, এর ওপর দাদন ব্যবসায়ী। ফলে জেলেদের থেকে হাত বদল হওয়া পরই ইলিশ দাম দৌড়াতে থাকে।
মাছ ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, গত দুই দিন থেকে দাম বেড়েছে। আজও (শুক্রবার) দামটা একটু বেশি। নদীতে মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। শরীয়তপুর, চাঁদপুর, বরিশাল এসব এলাকায় নদীতে পানি কম। যে কারণে মাছও কমে এসেছে। নদীতে পানি যত বেশি হবে, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশও বেশি ধরা পড়বে।
বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইলিশ তো আছেই, সবগুলো তো পদ্মার না। অধিকাংশই চিটাগাংয়ের (চট্টগ্রাম)। আপনি যদি পদ্মার ইলিশ খেতে চান, তাহলে দামটা একটু বেশিই গুণতে হবে। নদীতে যখন পানি বাড়বে, বেশি মাছ ধরা পড়বে, তখন দামও কমে যাবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
মাছ বিক্রেতা শরিফ মিয়া বলেন, শুক্রবার হওয়ায় বাজারে ক্রেতার পরিমাণ বেশি। কিন্তু সে তুলনায় পদ্মার ইলিশ নেই। তাই একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে কেজিতে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকৃতির এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ থেকে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭শ টাকা কেজি করে। এরচেয়ে বড় আকৃতির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে। আর ছোট আকৃতির মধ্যে ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা কেজি করে।
আরবিসি/০৫ আগস্ট/ রোজি