• শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

পিটুনীর ঘটনা সত্য দাবি করে সেই অধ্যক্ষের ফোনালাপ ফাঁস করলেন আসাদ

Reporter Name / ৩৫৪ Time View
Update : শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে ‘বেধড়ক পিটুনী’র শিকার গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী কলেজ অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দুইদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে সব ঘটনা অস্বীকার করে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করলেও মারপিটের ঘটনাটি সত্য বলে দাবি করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

তিনি দাবি করেন, মারপিটের ঘটনার পর ওই কলেজ অধ্যক্ষ ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলেছিলেন। এখন চাকরি হারানোর ভয়ে তিনি (অধ্যক্ষ) ডিগবাজ দিয়ে এমপির পক্ষেই অবস্থান নিয়ে সত্য ঘটনা আড়াল করেছেন।

শনিবার সকালে রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর মোড়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের অফিসে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব অফিযোগ করেন আ’লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় ওই অধ্যক্ষকে পেটানোর ঘটনার বিষয়ে অধ্যক্ষ এক আ’লীগ নেতার সঙ্গে কথোপকথোনের একটি অডিও ফাঁস করেন আসাদ। অডিওতে শোনা যায়, তিনি (অধ্যক্ষ) মারপিটের শিকারের ঘটনা জানিয়ে প্রতিকারের অনুরোধ জানান।

সেই কথোপকথোনের অডিওটির কপি সাংবাদিকদের শুনিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে গত ৭ জুলাই ফারুক চৌধুরী এমপি পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ১১ জুলাই তাকে ফোন করে পুরো ঘটনা বলে তার সহযোগিতা চেয়েছিলেন।

আসাদ অভিযোগ করেন, ঘটনা ধামাচাপা দিতে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেন এমপি ফারুক চৌধুরী ও অধ্যক্ষ সেলিম রেজা দুজনেই। তবে এ ব্যাপারে রাজশাহী- ১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনো অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করতে আসাদুজ্জামান আসাদ সেলিম রেজার বিষয় নিয়ে ইস্যু তৈরী করছেন। এমপির সঙ্গে ওই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও দাবি করেছিলেন এমপি সাহেব তাকে মারেননি। পুরো ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো।

অবশেষে শনিবার ১০ মিনিটের ফাঁস হওয়া অডিওতে সেলিম রেজা গত ৭ জুলাইয়ের রাতের ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে ফোন করে। শেষে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে এলো।

এর আগে গত ১৩ জুলাই কয়েকটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকশিত হয়। এরপর তোলপাড় শুর হয়ে। শিক্ষক সমাজও ফুসে উঠেন। তবে ঘটনা আড়াল করতে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ডিগবাজি দেন। চলে যান আত্মগোপনে। হঠাৎ করেই গত ১৪ জুলাই এমপি ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে তার পাশে বসে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনাটিকে অস্বীকার করেন। তারা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। সেখানে সাংবাদিকদেরও দোষারোপ করা হয়।

এদিকে গঠিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির কাছেও একই বক্তব্য দেন সেলিম রেজা। ফলে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পেটানোর ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হয় জনমনে। অবশেষে শনিবার সেলিম রেজার জবানিতে ফাঁস হওয়া কথোপকথনে বেরিয়ে এসেছে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার পুরো ঘটনা।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা নিজে মারধরের শিকার হয়েছেন এবং সেদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে কথোপোকথন করছেন সেটির অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের শোনান।

এছাড়াও এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিভিন্ন সময়ের অপকর্মগুলো তুলে ধরেন আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি এমপি ফারুক চৌধূরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্নসাৎ, খাসজমি ইজারায় দুর্নীতি, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এবং জামায়াত-বিএনপির ব্যক্তিদের নিয়োগসহ ২০ ধরনের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দুদক বলে ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

এছাড়া ২০১১ সালে তানোর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী, আব্দুল করিম সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭০ ভাগ জামায়াত বিএনপির ক্যাডারদের চাকরী প্রদান, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় নেতাকর্মীদের জুতাপেটা, স্কুলের ক্লাস বন্ধ রেখে সংবর্ধনা নেওয়া, মাদকব্যবসায়ীকে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে বসানো, নৌকায় ভোট না দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে জড়ির থাকার অপকর্ম তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুলাই এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজায় গোদাগাড়ী উপজেলার সাতজন কলেজ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সামনে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল সেলিম রেজাকে মারপিট করেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষকে মারপিটের ঘটনার তদন্ত শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো চলমান ছিল।

তদন্ত কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লাহ মাহফুজ আল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে গিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। তারা রাজাবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক নেতা ও মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলেছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান মোল্লাহ মাহফুজ আল হোসেন জানান, তারা শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো তদন্ত কাজ করেছেন। শিগগিরই অধ্যক্ষ হেনস্তার বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রতিবেদন জমা দেবেন। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমকেও জানানো হবে।

আরবিসি/১৬ জুলাই/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category