স্টাফ রিপোর্টার : ভরা বর্ষাতেও রাজশাহী অঞ্চলে টানা তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। টানা তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর জনজীবন। আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। তীব্র গরমের দাপটে ছেদ ঘটেছে এবারের ঈদ আনন্দেও। মানুষজন প্রাণভরে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন নি। আমন চাষাবাদ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
প্রতিবছর ঈদের দিন সকাল থেকেই রাজশাহীর পদ্মার পাড়সহ বিভিন্ন বিনোদন স্পট লোকে লোকারণ্য থাকলেও এবার সেই চিত্র নেই। ঈদের পর থেকে কেবল সন্ধ্যার পর এসব এলাকায় লোকজন দেখা যাচ্ছে। দিনের বেলায় বাইরে বের হলেই মনে হচ্ছে অগ্নিকুণ্ড। বৃষ্টি নেই, বাতাস নেই। তার ওপর ঠিকমতো থাকছে না বিদ্যুৎও! রোদ, গরম আর লোডশেডিংয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন রাজশাহীর মানুষ।
সর্বশেষ ঈদের দিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের দিন সোমবার তাপমাত্রা সামান্য কমলেও পরের দিন আরও বেড়েছে। সোমবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিমক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
r
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রেজওয়ানুল হক জানান, ঈদের আগে থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এবার ঈদও কেটেছে বৃষ্টিহীন। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও বৃষ্টি নেই রাজশাহীতে। তাই তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদি রূপ নিয়েছে। মার্চ-এপ্রিলের তীব্র তাপপ্রবাহের পর থেকে রাজশাহীর ওপর দিয়ে কখনও মৃদু আবার কখনও মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। ভারী বর্ষণ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার আপত কোনো সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক বলেন বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকায় রাজশাহীতে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। ৩৭/৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা হলেও সেটি ৪০ ডিগ্রির ওপরে অনুভূত হচ্ছে বলেও জানান রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে অব্যাহত রোদ আর গরমে নাজেহাল হয়ে পড়েছে রাজশাহীর জনজীবন। সকাল ১১টা বাজার আগেই রোদে মাঠ-ঘাট তেতে উঠছে। আর দুপুর ১২টা মধ্যে পিচঢালা রাস্তা দিয়ে যেন আগুনের হলকা ছুটছে। চোখ-মুখে রোদের তাপ এসে যেন পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। তীব্র গরমে মানুষ পড়ছেন বিপাকে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো এই রোদ আর গরমে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, টানা তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের আমনের মাঠ। পুকুর বা খালের পানি দিয়ে কোনোরকম চাষাবাদ করছে কৃষকরা। সময়মতো বৃষ্টি না হলে পানি সংকটের কারণে আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার আবাদি জমির মাঠ ধু-ধু হয়ে পড়ে রয়েছে। পুকুরের সামান্য পানি সেচের মাধ্যমে বীজতলায় দিয়ে বীজ বপন করলেও সে চারা দিয়ে সামান্য পরিমাণ জমিতে রোপণ করা যাচ্ছে। ফলে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকরা বলেন, এবার বৃষ্টি না হওয়ায় বৃষ্টি নির্ভর আবাদী জমি পড়ে রয়েছে। বৃষ্টির অভাবে রাজশাহীর অনেক জমি অনাবাদি রয়েছে। কৃষকরা জানান এই সময় বৃষ্টির পানির জন্যই অপেক্ষা করতে হয়। তবে এভাবে টানা তাপপ্রবাহ থাকলে বৃষ্টির অভাবে বরেন্দ্র এলাকার কৃষকেরা ধান লাগাতে পারবেন না।
আরবিসি/১৩ জুলাই/ রোজি