স্টাফ রিপোর্টার : দুয়ারে পবিত্র ঈদুল আযহা ঘনিয়ে এসেছে। হাতে গোনা আর মাত্র কদিন পরই ঈদের উৎসব। সময় খুবই কম। তাই শেষ সময়ে কোরবানীর পশু হাটে উপচে পড়েছে মানুষ। কোরবানির পশু কিনতে এখন হাটে ছুটছেন সবাই। তাই শেষ মুহূর্তে রাজশাহীর পশু হাটে মানুষের ঢল নেমেছে। এতে হাসি ফুটেছে পশু বিক্রেতাদের মুখেও।
এখন কেবল দরদাম নয়, কোরবানির পশু কেনাবেচাও শুরু হয়েছে জোরতালে। তাই সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে কোরবানির জন্য হাটের সেরা পশুটিই কিনতে চাইছেন সবাই। বুধবার সকাল থেকেই রাজশাহীর পশুহাটে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সময় যত গড়াচ্ছে ভিড় ততই বাড়ছে। দুপুর গড়াতে যেন জনস্রোত তৈরি হয়েছে রাজশাহী সিটি পশু হাটে। তবে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করলেও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই! পশু হাটের চিত্র এখন অন্য সময়ের মতই। পশু কেনাবেচা আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের এক একটি শব্দে সরগরম পশু হাট। শেষ মুহূর্তের কোরবানির হাটে বৃহস্পতিবার পশু ও ক্রেতা দুইই বেড়েছে। ফলে হাসি ফুটেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মুখে। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এবং শহরের কাছে হওয়ায় সিটি হাটেই ছুঁটছেন শহরের ক্রেতারা। সকাল থেকেই তাই কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে সিটি হাট। গরু আর ছাগলের আমদানিও হয়েছে প্রচুর।
তবে শেষ সময়ে পিছিয়ে নেই মহানগরীর উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালির মাসকাটা দীঘি, গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি, তানোরের চৌবাড়িয়া, পুঠিয়ার বানেশ্বরের পশু হাটও। কোরবানির পশু কেনাবেচা নিয়ে সমানতালে ব্যস্তাতা বেড়েছে এগুলোতেও।
বুধবার সকালে রাজশাহীর সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায় ভারতীয় গরু নেই। এই পশু হাটের আধিপত্য রয়েছে দেশি গরুরই। তবে বড় গরুর চেয়ে ছোট এবং মাঝারি আকারের গরুর কাছেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি, চাহিদাও বেশি। হাটে বড় গরুর চেয়ে মাঝারি গরুরই কদর বেশি। আর দুপুর থেকে দামও কমতে শুরু করেছে। খেই ধরে না রেখে অল্প লাভ হলেও সামান্য দর-দামেই এখন নিজের পশুটি ছেড়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। শেষ সময়ে ক্রেতারও এই সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। ফলে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম সিটি পশুর হাট আজ জমজমাট হয়ে উঠছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই চেষ্টা করছেন, কিভাবে আরও কম দামে গরু-ছাগল পাওয়া যায়, আর একটু কম দাম হলেও তা বিক্রি করে কিভাবে ঈদের ৩/৪ দিন আগেই হাট থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়া যায়।
সিটি হাট কমিটি ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রবিবার থেকেই মূলত পশুহাট জমেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার লোক বেশি এবং অন্যদিনের তুলনায় দামও একটু কম। সকাল থেকেই আশেপাশের গ্রাম থেকে গরু, ছাগল ও মহিষ, ছাগল আসছে। দুপুর ১টা গড়াতেই কোরবানির গরুতে হাট ভরে গেছে। এখন চলছে দর কষাকষি ও পশু বেচা-কেনা। চাঁদ রাত পর্যন্তই এখন প্রতিদিনই চলবে বেচাকেনা।
রাজশাহী মহানগরীর শলাবাগান এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, দুপুরেই হাটে এসেছেন। তবে হাটে প্রচুর মানুষের সমাগম। কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। মানুষ আর পশুর মাথা গোনা মুশকিল। সবাই ভিড় ঠেলে ঘুরে ঘুরে গরু দেখেছেন। সরবরাহ বেশি। দাম অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। তাই দুপুর গড়াতেই দরদাম করে ৭০ হাজার ৫০০ টাকায় একটি মাঝারি আকৃতির গরু কিনেছেন। তবে এই দাম গতবারের চেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেন কোরবানির গরু কিনতে আসা এই ক্রেতা।
তিনি বলেন, বড় গরু দাম আরও চড়া। তাই হাটে দেশি মাঝারি এবং ছোট আকারের গরুরই চাহিদা বেশি। আজ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে ছোট আকারের (৬০-৭০ কেজি) গরু পাওয়া যাচ্ছে। বড় আকৃতির গরু ৮০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকারও ওপরে দাম হাঁকা হচ্ছে।
এছাড়া ছাগলের দামও কম বলে জানান, পবার পারিলা থেকে আসা খামারি গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, মৌসুমের শেষ দিকে এখন ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ৮ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৪ থেকে ১৮ কেজি ওজনের ছাগলের দাম ১২ থেকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ও বড় আকৃতির ছাগলের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহীর পবার দামকুড়া থেকে সিটি হাটে আসা সাইদুর রহমান জানান, ৭টি গরু নিয়ে এসেছেন। সকালেই ৯০ হাজার ৮০০ টাকায় তার সবচেয়ে বড় গরুটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকিগুলোর দাম হাঁকছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যেই। এই কোরবানির মৌসুম শুরুর পর আজই একটু কম দাম চাচ্ছেন বলেও দাবি করেন এই ব্যবসায়ী। রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন ডাবলু বলেন, সীমান্ত বন্ধ। এবার ভারতীয় গরু নেই। হাটে দেশি গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর শেষ সময়ে এখন ক্রেতাও বেশি।
ব্যবসায়ীরাও দাম কমাতে শুরু করেছেন। প্রথম দিকে চড়া দাম হাঁকলেও এখন বেশি দর কষাকষি করছেন না। মোটামুটি দাম উঠলেই খামারিরা পশু ছেড়ে দিচ্ছেন। ঈদের আগের সপ্তাহে তাই সবাই সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী গরু কিনতে পারছেন।
তিনি জানান চাঁদরাত পর্যন্ত প্রতিদিনই হাট বসবে। শেষ সময়ে হাটের সার্বিক নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান সিটি হাটের এই ইজারাদার।
আরবিসি/০৬ জুলাই/ রোজি