• বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ

সাপের বন্ধুত্ব

Reporter Name / ৪৭৪ Time View
Update : শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২

রাবি প্রতিনিধি : মানুষ স্বভাবতই সাপ দেখলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়। আবার কিছু মানুষ লাঠি-সোটা নিয়ে মারতে উদ্যোত হয়। এমনকি বাস্তুতন্ত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই প্রাণিটিকে অনেকে দেখা মাত্র মেরেও ফেলে। মানুষের সাথে সাপের যেন দা-কুমড়া সম্পর্ক। তবে এই দা-কুমড়া সম্পর্কটাকে ঠিক করতে দীর্ঘ তিনবছর যাবত কাজ করে যাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
যিনি ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে অন্তত ৪০টি সাপ উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে অবমুক্ত করে দিয়েছেন। যেন তিনি সাপের বন্ধু। বলছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়টির ম্যানেজম্যান্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান তাসিবের কথা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে কিংবা হলে, দোকানপাটে কিংবা রাস্তাঘাটে যেখানেই সাপের দেখা মিলে সেখানেই ডাক পড়ে তাসিবের। আর সকল কাজের ব্যস্ততা ফেলে ডাক পাওয়া মাত্রই ছুটে আসেন তিনি। সাপ যত্নসহকারের উদ্ধারের পাশাপাশি উপস্থিত সকলকে সাপ সম্পর্কে সম্যক ধারণাও দেন তাসিব। ফলে ক্যাম্পাসে সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতাও কমে গেছে।
সাপ উদ্ধার করার মতো বিপদজনক কাজকে সাদরে আলিঙ্গন করার বিষয়ে কথা হয় মিজানুর রহমান তাসিবের সঙ্গে। শুরুর গল্পে তাসিব বলেন, ছোটবেলা থেকেই যেকোনো পশু-পাশির প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা ছিল তার। রাবিতে ভর্তি হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে তিনি দেখেন ক্যাম্পাসে বাচ্চাসহ একটি সাপকে মারার পোস্ট দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন করছেন কিছু শিক্ষার্থী। বিষয়টি দেখে মর্মাহত হন তিনি। এরপরই বাংলাদেশের সকল সাপ সম্পর্কে জ্ঞান আরোহন করতে শুরু করেন এবং ‘ডীপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’ নামের এক সংগঠনে যুক্ত হন তিনি। তারপর থেকে সাপ সম্পর্কে সকল প্রকার ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে বোঝাতে শুরু করেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিজেই সাপ উদ্ধার কাজ শুরু করেন বলে জানায় এই শিক্ষার্থী।

তাসিব জানায়, তার সাপ উদ্ধার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরে। প্রথমদিকে নির্বিষ সাপগুলো উদ্ধার করতেন তিনি। এরপর ২০২১ সালের জুন মাসে ‘ডীপ ইকোলজি এন্ড স্নেক ফাউন্ডেশন’র মাধ্যমে বিষধর গোখড়া সাপ উদ্ধার করার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পায় এই শিক্ষার্থী। তারপর ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে জলঢোড়া, চিত্রিত ঢোড়া, বেত আছড়া, দাড়াশ, ঘরগিন্নি, মেটে এবং হেলে সাপের পাশাপাশি খৈয়া গোখরা এবং কালাচ বা পাতি কাল কেউটের মতো বিষধর সাপও উদ্ধার করেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে করোনার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে অক্টোবরের ১৪ তারিখে রাবির প্রত্যেকটি হলে সাপ না মেরে উদ্ধারের জন্য ফোন করার আহ্বান জানিয়ে একটি করে পোস্টার টানাই। পাশাপাশি হলের গার্ডদেরকেও সচেতন করি। আর এই কার্যক্রমের ব্যাপারে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ফেসবুক গ্রুপেও সবাইকে জানাই। অত:পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হল, মাদার বখ্শ হল, তাপসী রাবেয়া হল, জোহা হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, চারুকলা এবং পরিববন মার্কেট থেকে প্রায় ১৫ টির মতো সাপ উদ্ধার করি। যার মধ্যে মারাত্মক বিষধর খৈয়া গোখড়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে উদ্ধারকৃত এশিয়ার অন্যতম বিষধর সাপ কালাচ বা পাতি কাল কেউটেও ছিল।

নিজে সাপ উদ্ধারের পাশাপাশি অন্যদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন তাসিব। তিনি বলেন, ২০২২ এর ফেব্রুয়ারী মাস থেকে রাবির বিভিন্ন শিক্ষার্থী যারা সাপসহ প্রকৃতি নিয়ে ভাবে, কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সাধারণ মেম্বার হিসেবে যুক্ত করি। প্রায় ২০ জন যুক্ত হয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে সাপ সংক্রান্ত বিস্তারিত ধারণা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে নিতে থাকে। তাদের ক্লাস শেষ। পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে তারা আমার সাথে সাপ উদ্ধারকাজে যাচ্ছে, সামনে থেকে সব শিখছে।

তাসিব জানায়, রাবিতে সচরাচর যেসব সাপ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভেমটা, মেটে, জলঢোড়া, দাড়াশ, বেত আছড়া, ঘরগিন্নি। এছাড়া বিষধর খৈয়া গোখড়া এবং কালাচ বা পাতি কাল কেউটে সাপেরও দেখা মিলে। এসব সাপকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে এবং একটি সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার দাবি জানায়ে তাসিব বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে সাপ উদ্ধারের পাশাপাশি অন্যান্য পশুপাখিও উদ্ধার কাজ করছি এবং বৃক্ষরোপনও করছি। উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ আমাদের নেই এবং শিক্ষার্থী হওয়ায় নিজে নিজে সবকিছু ক্রয় করার সামর্থ্যও কম আমাদের। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সহযোগীতা করলে আমরা আরও ভালো কাজ করতে পারব।’

তাসিবের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘তাসিব স্বপ্রণোদিতভাবে যে কাজটি করছে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটা আমাদের নজরে এসেছে। সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এবং তার চাহিদার বিষয়গুলো জানালে আমরা তাকে সাহায্য করব।’

আরবিসি/০১ জুলাই/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category