স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এরপরও মাস্ক পড়ছেন না সাধারণ মানুষ। সর্বত্র মাসক বিহীন চলাচল করছেন মানুষ। রাজশাহীতে সর্বশেষ করোনা শনাক্ত হয় গত রবিবার। এদিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৭১ শতাংশে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজ বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় সংক্রমণ বাড়লেও মাস্ক পড়ায় অনিহা দেখাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। দৈনন্দিন হাট-বাজার, মার্কেট, দোকান, ক্লিনিক-হাসপাতাল কোথাও মাস্কের ব্যবহার হচ্ছে না আগের মতো। আর আগে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এখন নেই। কোথাও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের সময় সংক্রমণের চূড়ায় থাকা রাজশাহীকে নিয়ে আবার শঙ্কা জাগছে। এই অবস্থায় সবাইকে আবশ্যিকভাবে বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ৮ জুন পর্যন্ত রাজশাহীতে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী ছিল না। এরপর ৯ জুন ৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ১৮ জুন পর্যন্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। ১৯ জুন ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় দু’জন শনাক্ত হন। এরপর ২০ জুন ২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ জন এবং ২১ জুন ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ২২ জুন ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৪ জন। ২৩ জুন ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ২ জন। এরপর সর্বশেষ ২৬ জুন ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে, রোগী না থাকায় গত ১৩ মে থেকে বন্ধ রয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট। তবে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে কর্তৃপক্ষ। করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হলে আবারও করোনা ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
তিনি বলেন, করোনার চতুর্থ ঢেউ আসার আশঙ্কা এখনও তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে করোনা একেবারেই চলেও যাবে না। এভাবেই দুর্বল হয়ে পৃথিবীতে থাকবে। এখন যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের শারীরিক পরিস্থিতি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো নয়। এরপরও তাদের চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা অবশ্যই মাথায় আছে। রোগী বাড়লে হাসপাতাল তো বটেই, সদর হাসপাতাল বা শিশু হাসপাতালেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, গত প্রায় একমাস থেকেই করোনার সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হচ্ছে সবাইকে। সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। ফের রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সামনে আরও শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টির ওপর বারবার জোর দেওয়া হলেও কার্যত তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে এন্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা আছে। তবে মানুষ করোনা টেস্টেও আগ্রহী না। এই বিষয়গুলো নিয়ে সব পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রাজশাহীর প্রায় ৭৪ শতাংশের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ। এখনও পর্যাপ্ত করোনা টিকা আছে। যারা টিকা নেননি, তাদেরকে দ্রুত টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদেরকে বুস্টার ডোজ নেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সর্বপরি বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।#
আরবিসি/০১ জলাই/ রোজি