• শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে বাংলাদেশ

Reporter Name / ৩৯২ Time View
Update : শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে রুট এএইচ-১-এর অংশ হওয়ায় তা যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে। এ সব তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। আর এই নেটওয়ার্ক চালু হলে ভারত, ভুটান ও নেপালে সরাসরি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের দুয়ার খুলবে। ট্রান্স এশিয়ান নেটওয়ার্কে যখন সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপে ট্রেন যাবে, তখন পদ্মা সেতু হয়ে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে যাবে এই পথ ধরে। তবে এজন্য বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরীর ওপর ১৭ কিলোমিটার রেল ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এটি করা গেলেই ট্রান্স এশিয়ান রেলে যুক্ত হবে পদ্মা সেতু। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ঘটবে এশিয়া ও ইউরোপে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, এশিয়ান হাইওয়ে এশিয়ার অন্য দেশের মতো উন্নত করতে না পারলে কাছাকাছি যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ভর করবে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তার ওপর। প্রাথমিকভাবে দ্বিতীয় ও অষ্টম করিডোরকে এশিয়ান হাইওয়ে মানের সড়কে রূপান্তরের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। এই এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।

ঢাকা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নড়াইল, ফরিদপুর, যশোর, বেনাপোল- উত্তরে চিলাহাটি হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত যাবে এই পথ। যা ইস্তাম্বুল, তেহরান, ইসলামাবাদের সঙ্গে ঢাকা-দিল্লিকে যুক্ত করবে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হবে দুই মহাদেশের দুই দূরতম প্রান্ত। যা ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। আর ইস্তাম্বুলকে যুক্ত করবে টোকিওর সঙ্গে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে আমরা এটা করেছি। সিঙ্গাপুর থেকে যখন ইউরোপে ট্রেন যাবে তখন পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। অনেক মালামাল নিয়ে যাবে, সুতরাং হেভি লোডেড সেতু বানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে রুট এএইচ-১-এর অংশ হওয়ায় তা যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে পদ্মা সেতু। এর মাধ্যমে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। দেশের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে পদ্মা সেতু। দেশের সার্বিক জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ঢাকা থেকে খুলনা, মোংলা, বরিশাল, কুয়াকাটা অর্থনৈতিক করিডোর খুলে যাবে।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-এর আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়ক। এসব সড়কের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করতে এসব সড়কের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে নকশাও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।

সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, অর্থনৈতিক করিডোরের আওতায় প্রথম করিডোরের দৈর্ঘ্য হবে ১৩৫ কিলোমিটার। ফরিদপুরের ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে করিডোরটি। এই রুট ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

দ্বিতীয় করিডোরের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১০৫ কিলোমিটার। এটি রংপুর-সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডোরটি অন্যতম অবদান রাখবে।

তৃতীয় করিডোরের মোট দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া-পায়রা বন্দরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ মহাসড়ককে সংযুক্ত করবে।

চতুর্থ করিডোরের রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার। সিলেটের চরখাই-শেওলা-সূত্রাকান্দি হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে।

পঞ্চম করিডোর হচ্ছে চট্টগ্রাম একসেস রোড। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ কিলোমিটার। এই করিডোরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।

ষষ্ঠ করিডোর হচ্ছে সাভার নবীনগর থেকে পাটুরিয়া রোড পর্যন্ত। এর মোট দৈর্ঘ্য ৫৮ কিলোমিটার। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারে অন্য করিডোরের রুটকে সহায়তা করাই এ রুটের অন্যতম উদ্দেশ্য। সরাসরি এই রুটটি অন্য দেশের সঙ্গে যুক্ত নয়।

সপ্তম করিডোর রুটের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এটি নাটোর-বনপড়া-ঈশ্বরদী-পাকশি-কুষ্টিয়া হয়ে ঝিনাইদহে মিলিত হয়েছে। এটিও অন্য রুটের সহায়ক হিসেবে আঞ্চলিক যোগাযোগে অন্যতম অবদান রাখবে।

অষ্টম করিডোরের মোট দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। এটি রংপুরের পাগলাপীর-ধালীয়া-বারখাতা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এই করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত হবে।

আরবিসি/২৫ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category