আরবিসি ডেস্ক : দেড় বছর ভালোবেসে বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ হবার পর প্রেমিক সুজনের অভিভাবকের আপত্তিতে বিয়ে ভেঙে যায়। এতে অভিমানে বিষপানে আত্মহত্যা করেন প্রেমিকা তামান্না (১৭)। বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ওই গ্রামের বাচ্চু মোল্লার মেয়ে তামান্নার সাথে প্রেম-ভালোবাসা গড়ে উঠে ফল ব্যবসায়ী যুবক সুজনের (২৬)। দু’পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা ও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। মেয়ের পরিবার দরিদ্র, মা বিদেশে থাকায় বিয়েতে আপত্তি জানায় সুজনের খালা মাহফুজা বেগম। সুজন কোনভাবেই তার অভিভাবক খালাকে বিয়েতে রাজী করাতে পারছিলোনা। তামান্না সুজনের খালার আপত্তির খবর পেয়ে ১৩ জুন বিষপান করলে আজ শনিবার (১৮ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তামান্নার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুজন পেশায় একজন ফল ব্যবসায়ী। আমতলী হাসপাতালে সড়কে তার খালু কালাম মুছল্লীর সাথে রয়েছে যৌথ ফলের আড়ৎ। তামান্নার বাবা পেশায় একজন কৃষক। মা নেহার বেগম সৌদি প্রবাসী। সুজনের মা নেই। তাই খালা খালু তার অভিভাবক। সুজন এবং তামান্নার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত মতে ১০ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়ের বাড়িতে বসে বিয়ে সম্পন্নের দিনক্ষণ নির্ধারন হয়। ছেলে সুজনের খালা মাহফুজা বেগম জানতে পারেন তামান্নার পরিবার দরিদ্র এবং মা নেহার বেগম সৌদি প্রবাসী। এই অজুহাতে সুজনের খালা মাহফুজা বেগম এ বিয়েতে বাঁধ সাধেন। এবং কোন অবস্থাতেই সে তার বোনের ছেলে সুজনের সাথে তামান্নার বিয়ে না দেবার কথা জানিয়ে দেন।
তামান্না সুজনের খালার আপত্তির কথা জানতে পেরে দুই দিন ধরে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সুজন তখন প্রেমিকা তামান্নাকে বিয়ের সকল ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ের ব্যবস্থা করতে না পারায় ১৩ জুন সোমবার ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে তামান্না। বিষপানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে তাৎক্ষণিক স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার অবস্থা সংকটপন্ন হলে ওই দিন দুপুরেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে আজ শনিবার সকাল ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তামান্নার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে শোকের ছায়া নেমে আসে। তামান্নার বাবা বাচ্চু মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ’মোর মাইয়াডারে বিয়ার আশ্বাস দিয়া সব শ্যাষ কইর্যা দিছে সুজন। সুজনের খালা মাহফুজা বেগম মোরা গরিব বইল্যা এবং মাইয়ার মায় বিদেশে থাহে হেই লইগ্যা বিয়া ভাইঙ্গা দেয়।’
অভিযুক্ত সুজনের খালা মাহফুজা বেগম জানান, ‘বিয়ার তারিখ অইছিল। মাইয়ার বাবা মা গরিব তাই আমরা বিয়া করাতে রাজি ছিলাম না। মেয়ে কি কারণে বিষ খাইছে হেইয়া আমাগো জানা নাই।’
প্রেমিক সুজন বলেন, শুক্রবার বিয়ার তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল। তবে কি কারণে তামান্না বিষপান করেছে তা আমার জানা নেই।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান বলেন, সুজন এবং তামান্নার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানতে পারি। তাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। এর মধ্যে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় তামান্না বিষপান করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে মারা যায়। সেখানে তার ময়না তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি বলেন।
আরবিসি/১৮ জুন/ রোজি