স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে বর্ষার বর্ষণ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হচ্ছে বজ্রপাত। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। সারাদেশে ওই সময় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। সবচেয়ে বেশি ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ জেলায়। সানশাইনের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ি।
ময়মনসিংহ সদর, নান্দাইল ও ধোবাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে তিন শিশুসহ ছয়জন মারা গেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনটি পৃথক বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন সদর উপজেলার দড়িকুষ্টিয়া বাল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আবু বকর (৪০), জাহাঙ্গীর আলম (৩০), নান্দাইল উপজেলার কংকরহাটি গ্রামের শহীদুল্লাহর ছেলে সাঈদ মিয়া (১২), হাদিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১১), বিল্লাল হোসেনের ছেলে মো. শাওন (৮), ধোবাউড়া উপজেলার চরমুহিনী গ্রামের আবু সাঈদ (৩০)।
কোতোয়ালি থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, দুপুরে ফসলের ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে বকর ও জাহাঙ্গীর মারা যান। একই সময় নান্দাইল উপজেলায় মারা যায় তিন শিশু – সাঈদ, স্বাধীন ও শাওন।
নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, তিন শিশু কংকরহাটি গ্রামে বৃষ্টির সময় একসঙ্গে মাছ ধরছিল। দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ বজ্রপাতে তারা আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ধোবাউড়ার সাঈদও মাছ ধরার সময় মারা যান। ধোবাউড়া থানার ওসি টিপু সুলতান জানান, সাঈদ সকালে এলাকার গুগড়া বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মারা যান। পরিবার অভিযোগ না দেওয়ায় সবার লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার আমগাছি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত কিশোর উপজেলার আমগাছি গ্রামের কাউছার আলীর ছেলে রাব্বি হোসেন। তার বয়স ১২ বছর। নিহত কিশোর রাব্বি হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। এটি ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর ঘটনা।
গোদাগাড়ী উপজেলায় গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে নারীর মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে নাদিরা(৫৫) নামের এক নারী মারা গেছে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের পূর্ব বামনাইল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সে পূর্ব বামনাইল গ্রামের পাতাল আলী মেয়ে।
নওগাঁর মান্দায় বজ্রপাতে নাঈম হোসেন (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে ওই গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষকের বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। মৃত আতাউর রহমান’র বাড়ি সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া এলাকায়।
আতাউর রহমান ওই কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে তাঁর নিজ বাড়ির পানির লাইনে সমস্যা হওয়ায় ছাদে গিয়েছিলেন। তখনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তার স্ত্রী ছাদে গিয়ে তাকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠেন। পরে লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে পুঠিয়া হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
বগুড়ার আদমদীঘিতে বজ্রপাতে জহুরুল ইসলাম (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জহুরুল উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউপির কোমারভোগ গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। শুক্রবার বেলা ১২ টায় নিহতের বাড়ির পাশে ফসলি মাঠে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
আদমদীঘি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ কুমার বর্মন বলেন, শুক্রবার বেলা ১২ টায় বাড়ির পাশে মরিচ ও অন্যান সবজি ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন জহুরুল। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।
এদিকে, সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে দুই জন নিহত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া জেলায় আরও বজ্রপাতে আহত হয়েছেন চারজন।
নিহতরা হলেন সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্নিরচর এলাকার দরবেশ আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫০) ও সয়দাবাদ ইউনিয়নের জগতলা এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে নাসির উদ্দিন (২৩)।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বৃষ্টির সময় এসব বজ্রপাত হয় বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ জানিয়েছে।
আরবিসি/১৭ জুন/ রোজি