স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে আলোর মুখ দেখলো ‘রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (আরএমইউ) প্রকল্প’ এর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি)। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিপত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় বহুল প্রতিক্ষিত এই প্রকল্পটি।
প্রায় ১ হাজার ৮৬৭ কোট টাকা ব্যায়ের রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ বড়বনগ্রম, বারই পাড়া ও বাজে সিলিন্দা মৌজার প্রায় ৬৮ একর জায়গার ওপর নির্মিত হবে দেশের প্রথম পরিকল্পিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সালের ১৮ নং আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতাল। দেশের উত্তরাঞ্চলে মেডিকেল শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে সেখানে ১০ টি অনুষদের অধীন ৬৮ টি বিভাগের মাধ্যমে প্রতিবছর ৭৮০ জন গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থী শিক্ষা ও গবেষনার সুযোগ পাবে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে এখানে ডাক্তার-নার্স সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেই সাথে রাজশাহীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে থাকা ১ হাজার ২০০ আসনের হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হলে উত্তর অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষ উন্নত চিকিৎসার আওতায় আসবে। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয়দের বিদেশে যাবার প্রবণতা কমবে। ফলে এই খাতে প্রতিবছর ব্যয় হওয়া প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
এদিকে ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুই ধাপে সম্পন্ন হবে প্রকল্প। প্রথম ধাপে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এই ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে সেবার পরিসর বাড়বে কয়েক গুণ। বিশেষায়িত ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখবে এ হাসপাতাল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিকে আরএমইউর আওতাধীন করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ১৩টি সরকারি, ১৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। দুটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, ছয়টি সরকারি ও ৩১টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ, একটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং ৭৪টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রকল্পটির অনুমোদিত হওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। একই সাথে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সহ একনেক সভার সকল সদস্য বৃন্দ, পরিকল্পনা কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
উপাচার্য বলেন, এত দিন পর বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে আরএমইউ। আজ একনেকে প্রকল্প ব্যয় পাশ হবার ফলে অবকাঠামোর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। পর্যায় ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হলে মেডিকেল শিক্ষায় উন্নতির পাশাপাশি দেশবাসীর উন্নত চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ মে অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম মোস্তাক হোসেন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়টির বাস্তবিক রুপ প্রদানের লক্ষ্যে ডিপিপি প্রনয়ের উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। যোগদান পর তার ঐকান্তিক প্রাচেষ্টায় এর ১ বছরের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় এর মত একটি বড় ও বিশেষায়ীত প্রকল্প একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
আরবিসি/১৪ জুন/ রোজি