রাবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য ঘোষিত ইনক্রিমেন্ট স্থগিত রাখার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে রাবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিকী কলম বিরতি কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানায় তারা।
এসময় স্থগিতকৃত ইনক্রিমেন্ট শীঘ্রই চালুর দাবি জানানোর পাশাপাশি শিক্ষকদের সম্মানিত ও গবেষণায় উৎসাহিত করতে দুটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার দাবি জানায় শিক্ষকরা। কর্মসূচিতে রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-জাহানের সঞ্চালনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হাসনা হেনা বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষকবান্ধব এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কেনো আমাদের অর্জিত অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হলো! এটা আমাদের প্রশ্ন। ইউজিসি যে ইনক্রিমেন্টটা বন্ধ করে দিয়েছে, আমরা দাবি জানাচ্ছি সেটা শীঘ্রই চালু করা হোক। পাশাপাশি আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি যে, আমাদের যেখানে একটা ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো, সেখানে আমাদের শিক্ষকদের সম্মানিত ও গবেষণায় উৎসাহিত করার জন্য দুটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হোক। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধকৃত ইনক্রিমেন্ট চালু না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।
বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক সাহেদ জামান বলেন, আজকে আমাদের ক্লাসে থাকার কথা, কিন্তু আমরা কলম বিরতি করতে বাধ্য হচ্ছি কেনো? এই প্রশ্ন আমরা জাতির কাছে রাখতে চাই। আমাদের শিক্ষকদেরকে প্রায়ই রাস্তায় নামতে হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারী পাকিস্তানের থেকে স্বাধীন হয়েছি। এখানে আমাদের সকল নাগরিকের প্রাপ্যটা যথাযথভাবে পাওয়ার কথা, কিন্তু আমাদের শিক্ষকদেরকেও দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে হচ্ছে, এটা দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, পিএইচডি ডিগ্রি না থাকাটাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যোগ্যতার ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য যে ইনক্রিমেন্টটা বরাবরই চলে আসছে, সেটা বন্ধ করা হয়েছে। কার ইঙ্গিতে এটা করা হয়েছে, আমরা জানিনা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এটা হচ্ছে কিনা সেটাও জানিনা। তবে, শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়টা যে জাতি ভাববেনা, তাদের উন্নয়ন কখনোই সুগম হবেনা বলে আমি মনে করি। শিক্ষকদের কেনো নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে, এটাতো সরকারের করা উচিত। সরকারের প্রতি আমি অনুরোধ রাখবো, আমাদের যেনো রাজপথে নামতে না হয়, সেই ব্যবস্থা তারা করবে।
কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ইনক্রিমেন্ট এটি শিক্ষকদের আর্থিক নয়, আমি বলব মর্যাদার সঙ্গে জড়িত। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সামনে অনেকরকম বিকল্প পথ থাকে তার কর্মজীবন তৈরি করার জন্য। একজন শিক্ষক যখন ছাত্র ছিলেন তখন সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশাকে বেছে নিয়েছেন। এটি জাতি, সমাজ এবং নিজের কাছে একটি অঙ্গিকার। তারা মূলত নিজের মেধাকে বিকশিত করার সুযোগ পেতে এবং জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে এখানে আসেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার ইতোপূর্বে শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ইনক্রিমেন্ট দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ সেটি বন্ধ করা হলো। তবে বন্ধ করার কারণটি এখনও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এটি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে শিক্ষদের আর্থিক সুবিধাকেই যে শুধু বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তা কিন্ত নয়। বিশ্ববিদ্য্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা নিয়ে আগামী দিনে যে সম্ভাবনা সেই সম্ভাবনার জায়গাটিকেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা ইউজিসি’র বোঝা উচিত, এরকম একটি সম্ভাবনার জায়গাটিকে কখনই বন্ধ করা উচিত নয়। আমরা চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউজিসির কাছে জোর দাবি জানানো হোক, যাতে অতি দ্রুত ইউজিসি ইনক্রিমেন্ট বন্ধের ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।’ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশত শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
আরবিসি/১৪ জুন/ রোজি