• রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

খালেদা জিয়ার হার্টে রিং পরানো হয়েছে

Reporter Name / ২৯৭ Time View
Update : রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : মাইল্ড হার্ট এ্যাটাক হওয়ায় আবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলশানের বাসায় হার্ট এ্যাটাক হওয়ার পর শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টায় তাকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে শনিবার দুপুরেই খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রের এনজিওগ্রাম করা হয়। হার্টে কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ায় তাঁর হার্টে রিং পরানো হয়। তাঁকে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদিকে বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়ার হার্টের এনজিওগ্রাম করার পর ব্লক ধরা পড়ায় সেখানে সফলভাবে রিং পরানো হয়েছে। তাঁর হার্টে কয়েকটি ব্লক ধরা পড়ে। তার মধ্যে একটি ব্লক ৯৫ শতাংশ। সেটিতে তাৎক্ষণিকভাবে রিং পরানো হয়েছে। চিকিৎসকরা আশা করছেন, তিনি আপাতত হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাবেন। এনজিওগ্রাম করার আগে তিনি বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার একিউট করোনারি হার্ট এ্যাটাক হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর হৃদযন্ত্রে এনজিওগ্রাম করার। একই সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলে।

গুলশানের বাসা ফিরোজায় শুক্রবার মধ্যরাতে খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন। রাত ২টা ৫৫ মিনিটে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে তাঁকে নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। রাত সোয়া ৩টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। ওই সময় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়ায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর মাইল্ড হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জনাচ্ছি।

ফখরুল বলেন, গত রাতে হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার আরেকটা উপসর্গ এসে যায়। সেটা হচ্ছে তার সাফোকেশন শুরু হয়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন যে, আর বিলম্ব না করে তার এনজিওগ্রাম করবেন। দুপুরেই তার এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। এনজিওগ্রামের পর হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় রিং পরানো হয়। হার্টের সমস্যার চিকিৎসা শেষে আপাতত খালেদা জিয়া রিলিফ পেয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থা এখন ক্রিটিক্যাল না হলেও স্থিতিশীল নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার আবেদন করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দেখাও করেছিলেন।এরপরও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হয়নি। খালেদা জিয়া আবারও অসুস্থ হওয়ার পর প্রমাণিত হলো তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হলে তাঁর জীবন হুমকির মধ্যে পড়বে। চিকিৎসকরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আবারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিলে এবং তাঁর কিছু হয়ে গেলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থায় বিএনপি কি করবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা দলীয়ভাবে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে জনগণের দাবি, তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো হোক। তাই আমি আবারও সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য দেশের বাইরে তার চিকিৎসা করার ব্যবস্থা নেয়া হোক।

বেলা ১১টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসে। বৈঠকে তাঁর আগের করা হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোমিন-উজ-জামান ও অধ্যাপক সামস মনোয়ারও ছিলেন।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। গতবছর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ ক’দফা এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ৬ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, ইমেজিং, ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট, হার্টের টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করান। এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। তবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন নতুন করে কোন সমস্যা হয় কি না। এতদিন তেমন কোন সমস্যা না হলেও শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার হার্টে সমস্যা দেখা দেয়।

প্রায় ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া এর আগে গতবছর ১৩ নবেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৮১দিন চিকিৎসা নেন। তখন হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি সিসিইউতে ছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে তাঁর চিকিৎসা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ৯ জানুয়ারি তাঁকে সিসিইউ থেকে ক্যাবিনে নেয়া হয়। ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় যান খালেদা জিয়া। এভারকেয়ারের চিকিৎসকরা আরও কিছুদিন হাসপাতালে রাখতে চাইলেও খালেদা জিয়ার ইচ্ছায় তাঁকে বাসায় ফেরার অনুমতি দেয়া হয়।

খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত গৃহকর্মী ফাতেমাসহ গুলশানের বাসা ফিরোজায় ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হলে গতবছর ১০ এপ্রিল তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। ১১ এপ্রিল রিপোর্ট প্রকাশিত হয় খালেদা জিয়া করেনায় আক্রান্ত। এর পর থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নেন। ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভাল আসায় ওইদিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি।

গতবছর ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওইদিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ মে তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সিসিইউতে থাকা অবস্থায় ২৮ মে খালেদা জিয়া হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হন। তবে ৩০ মে তার জ্বর নিয়ন্ত্রণে আসে। নতুন করে বড় রকমের কোন সমস্যা না হওয়ায় ৩ জুন তাঁকে সিসিইউ থেকে ক্যাবিনে নেয়া হয়। এভারকেয়ারে ভর্তি থাকা অবস্থায় ১৩ জুন আবারও জ্বরে আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। এর পর থেকে তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন।

গতবছর ৮ জুলাই করোনার টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেন খালেদা জিয়া। এর পর ১৯ জুলাই তিনি মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে করোনার প্রথম ডোজ এবং ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন। ১১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শরীরের একটি অংশের চামড়া ফোসকার মতো (চাকা) হয়েছিল। এ জন্য ২৫ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর বায়োপসি করা হয়। ২ নবেম্বর খালেদা জিয়ার বায়োপসির নমুনা উন্নত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। উন্নত পরীক্ষার পর ওই দুই দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রিপোর্ট দেখিয়ে আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭দিন চিকিৎসা নেয়ার পর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায়িে ফরেন গতবছর ৭ নবেম্বর। এ বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রাজধানীর মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে তিনি আগের দুই ডোজের মতো গাড়িতে বসেই বুস্টার ডোজ নেন।

আরবিসি/১২ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category