আরবিসি ডেস্ক : কোথাও পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া পোশাক আবার কোথাও বিস্ফোরিত হওয়া বিভিন্ন রাসায়নিকের ছোট ছোট কনটেইনার। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লোহার টুকরা, বড় কনটেইনার আর কাভার্ডভ্যানের ধ্বংসাবশেষ। পাঁচ-ছয়টি কনটেইনার থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। আকাশে উড়ছে পুড়ে যাওয়া বিষাক্ত রাসায়নিকের ধোঁয়া আর বাতাসে লাশের গন্ধ। সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর ছিল। গুঁড়িয়ে গেছে সেটিও। সব মিলিয়ে পুরো ডিপো এখন যেন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা।
মঙ্গলবার (৭ জুন) সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক থেকে দক্ষিণে ১০০ মিটারের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কনটেইনারগুলো থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফটক থেকে ১০০ মিটার পূর্ব দিকে গেলে টিনশেডের আধাপাকা গুদাম। গুদামের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ছোট ছোট নীল রঙের কনটেইনার। গুদামের উত্তর পাশে অফিস কক্ষ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে লাগানো এসিগুলোর ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। গুদামে গার্মেন্ট পণ্য রাখা ছিল। সেগুলো এখনও তুষের মতো জ্বলছে। দক্ষিণ পাশের সামনের অংশে তিনটি কনটেইনারে এখনও আগুন জ্বলছে।
এদিকে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও মামলা না করায় ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একইসঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিএম ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিমুক্ত কোনোটি বলা যাচ্ছে না। যেকোনও কনটেইনার থেকে এখনও আগুন লাগতে পারে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আগুন লাগার ঘটনা ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডি পৃথকভাবে তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে মামলা করা হবে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। ছলিম উদ্দিন নামে এক স্থানীয় এক লাইব্রেরির মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনার চার দিনেও দোষীদের চিহ্নিত করা হয়নি। আমরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আছি। বিএম ডিপোতে আগুন এখনও জ্বলছে। রাসায়নিক দ্রব্যের তেজস্ক্রিয়তায় ভবিষ্যতে নানা অসুখ-বিসুখ ছড়ানোর খবর শুনতে পাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন।’
জাহিদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বিএম ডিপোর মালিকের গ্রেফতার দাবি করে বলেন, ‘এত বড় ঘটনা ঘটে গেলো। এত মৃত্যু যাদের জন্য হয়েছে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।’
এর আগে, সকালে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, ‘কিছু কিছু কনটেইনারে এখনও হালকা আগুন জ্বলছে। তবে ডিপো পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত। বিএম ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের সঙ্গে যোগ দেন সেনাবাহিনীর প্রায় আড়াইশ জন।’
তবে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান অপর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখনও বিএম ডিপোকে অগ্নিকাণ্ড থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিমুক্ত কোনোটি বলা যাচ্ছে না। যেকোনও কনটেইনার থেকে আগুন লাগতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করার জন্য আসে। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষের তথ্য জোগান ও সহযোগিতার অভাবের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডবাসীও এর ভুক্তভোগী। ফায়ার সার্ভিসের ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও তিন জন নিখোঁজ রয়েছেন। ১২ জন সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
আরবিসি/০৭ জুন/ রোজি