আরবিসি ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালজুড়েই ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা পান ব্যবসায়ীরা। এসব সুবিধার কারণে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি। ২০২১ সালের মার্চ প্রান্তিক থেকে বিশেষ সুবিধা না থাকায় খেলাপি ঋণের অংক বেড়েই চলেছে। চলতি বছর মার্চ প্রান্তিকে যা ছাড়িয়েছে সর্বকালের রেকর্ড।
চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা গত বছরের (২০২১ সালের মার্চ প্রান্তিক) একই সময়ে ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তিন মাসের তুলনায় বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি (২০২২) সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে (মার্চ প্রান্তিক শেষে) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা মোট ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ০১ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছিল ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ৪৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
চলতি বছরের মার্চ শেষে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা এই অংক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে (মার্চ শেষে) বিদেশি ব্যাংকগুলো ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে দুই হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, বা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
খেলাপি বৃদ্ধি এবং সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে।
সাবেক এ গভর্নর জাগো নিউজকে বলেন, কোভিডের পর কিছুটা মন্থর হয়েছে সবকিছু। এখন আবার ইউক্রেন সংকট আসায় একটা টালমাটাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে এক্সপোর্ট কমে যাচ্ছে, রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে, ইমপোর্ট বাড়ছে। ইমপোর্ট পেমেন্ট পরিশোধে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সবাই। কিন্তু ঋণ আদায় করার ব্যাপারে রিলাক্স ভাব, এতে মূল স্তম্ভইতো দুর্বল হচ্ছে, খেলাপি বাড়ছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকাররা ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, তেলের দাম নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। খেলাপি নিয়ে ব্যাংকারদের খেয়াল নেই। এখন ঋণ আদায় ঢিলে হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে।
প্রভিশন নিয়ে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংক খাতের জন্য খারাপ জিনিস। এটা সাধারণ মানুষ জানলে ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাবে। খেলাপি-প্রভিশন নিয়ে সরকারকে কড়া নজর দিতে হবে। নতুন বাজেট আসছে, সেখানে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সরকারের এখন ব্যাংকনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরবিসি/০৫ জুন/ রোজি