• রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন

পুঁজিবাজারের জন্য ৩ ‘সুখবর’ থাকছে বাজেটে

Reporter Name / ১৪৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : পুঁজিবাজারের জন্য তিন সুখবর নিয়ে আসছে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। যা বাজারে গতি ফেরাবে, নতুন নতুন কোম্পানি বাজারে আসতে উৎসাহিত হবে, বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হবেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাড়বে সরকারের রাজস্ব।

এগুলো হলো- করপোরেট কর হার কমানো, অপ্রর্দশিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ এবং ডলারের সংকট মেটাতে রপ্তানি পণ্যের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনা; যার বেশিরভাগই পাবে তৈরি পোশাক ও ওষুধ খাতের কোম্পানি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করপোরেট কর কমানো সুখবর। তবে ঢালাওভাবে না কমিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা দিতে হবে। এতে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে।

তিনি বলেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পর খুব বেশি অর্থ পুঁজিবাজারে যে আসছে তা নয়, তবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডলারের সংকট মেটাতে রপ্তানি পণ্যের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করপোরেট কর কমানো এবং অপ্রর্দশিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধাসহ বেশি কিছু বিষয় বাজেটে রাখার জন্য প্রস্তাব করেছি। দেশের অর্থনীতি, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আমরা সরকারের কাছে এই প্রস্তাব রেখেছি, আশা করছি বিষয়গুলো বাজেটে থাকবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে করপোরেট কর হার কমাতে হবে। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১৫ শতাংশ রাখতে হবে। তাহলেই বিদেশি ও দেশি ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে। শেয়ারহোল্ডাররা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন। করপোরেট কর ছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দ্বৈত কর প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

করপোরেট কর
আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে। পাশাপাশি বার্ষিক ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ছাড়া সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করতে হবে।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ কোম্পানির কর হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমে ২০ শতাংশ করা হতে পারে। এক ব্যক্তির মালিকানার কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক-বিমা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেবাদানকারী কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৪০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া সিগারেট, বিড়ি, জর্দাসহ তামাকজাত কোম্পানির ৪৫ শতাংশ এবং মোবাইল অপারেটরদের কর হার ৪৫ শতাংশ। সেখান থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে।

কালো টাকা বিনিয়োগ
চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মাত্র ২৮৬ জন বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।

প্রত্যাশা অনুসারে বিনিয়োগকারীরা কালো টাকা বিনিয়োগ না করায় নতুন অর্থবছর থেকে সাধারণ ক্ষমার (ট্যাক্স অ্যামনেস্টি) সুবিধা বাতিল করছে সরকার। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোনো প্রশ্ন করবে না এমন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আর ন্যূনতম এক বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ধরতে রাখতে হবে এই নিয়ম থাকছে না। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিধানও মানতে হবে না।

চলতি বছরের বাজেটে অ্যামনেস্টি (সাধারণ ক্ষমা) সুবিধা বহাল রেখে ১০ শতাংশের পরিবর্তে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হয়। যারা এই সুবিধা নিয়ে বিনিয়োগ করছেন তাদেরকে পুঁজিবাজারে ন্যূনতম এক বছর বিনিয়োগ রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার নির্দেশ না রয়েছে।

বিশেষ প্রণোদনা
ডলার ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যা আগের বছরের জন্য ছিল ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে ৪৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়া এবং ওষুধ খাতসহ ৪২টি পণ্যের কারখানাগুলো এ সুবিধা পাবে। এতে ডলারের সংকটের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

আরবিসি/০২ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category