• রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন

প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়ছে

Reporter Name / ৯৫ Time View
Update : শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : বয়স্ক, বিধবাসহ বর্তমানে সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখের বেশি উপকারভোগী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাসিক ভাতা পাচ্ছে। নতুন বাজেটে আরও ১১ লাখকে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে মোট ১ কোটি ১৫ লাখ লোক সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধীদের আরও সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। তাদের মাসিক ভাতা ও আওতা দুটোই বাড়ছে। বয়স্ক, বিধবাসহ অন্যান্য উপকারভোগীর ভাতা না বাড়লেও সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

অর্থ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বর্তমানে জনপ্রতি প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৭৫০ টাকা। নতুন বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৮৫০ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।

এখন সারা দেশে ২০ লাখ প্রতিবন্ধী সরকার থেকে নিয়মিত নগদ মাসিক ভাতা পাচ্ছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যায় নতুন আরও ৩ লাখ যুক্ত হচ্ছে। ফলে মোট ২৩ লাখ প্রতিবন্ধী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসছে।

বয়স্ক, বিধবাসহ বর্তমানে সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখের বেশি উপকারভোগী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাসিক ভাতা পাচ্ছে। নতুন বাজেটে আরও ১১ লাখকে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে মোট ১ কোটি ১৫ লাখ লোক সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসবে।

 

এদের সবার জন্য মাসিক যে ভাতা দেয়া হবে, তাতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।

এবার ভাতার অঙ্ক এবং আওতা বাড়ানোর জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব করা হলেও বাজেট স্বল্পতার কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় তা গ্রহণ করেনি।

পরে শুধু প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়িয়ে অন্যান্য উপকারভোগীর আওতা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তিন বছর ধরেই ভাতা অপরিবর্তিত রেখে শুধু আওতা বাড়ানো হচ্ছে।

সরকারের লক্ষ্য ছিল তিন বছরের মধ্যে দেশের সব উপজেলার ‘যোগ্য উপকারভোগীদের’ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যে প্রথম বছর ১১২টি এবং দ্বিতীয় বছর ১৫০টি উপজেলাকে ভাতার আওতায় আনা হয়।

বাকি আছে ২৬২টি উপজেলা। কথা ছিল আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাকি সকল উপজেলাকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হবে, কিন্তু অর্থের অপ্রতুলতার কারণে এবার ১০০টি উপজেলার যোগ্যদের ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে কয়টি উপজেলা বাকি আছে, সেগুলোকে পরে যুক্ত করা হবে।

বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবাসহ আট ধরনের কর্মসূচি চালু আছে, যারা নিয়মিত নগদ মাসিক ভাতা পান। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এসব কর্মসূচি দেখভাল করে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা। এখন সারা দেশে ৫৭ লাখ মানুষ বয়স্ক ভাতা পান, ভাতার পরিমাণ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা। এর পর রয়েছে বিধবা ভাতা। এই সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ এবং ভাতা ৫০০ টাকা।
প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা
বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবাসহ আট ধরনের কর্মসূচি চালু আছে, যারা নিয়মিত নগদ মাসিক ভাতা পান। ফাইল ছবি

প্রতিবন্ধীরা তৃতীয় অবস্থানে আছে, যার সংখ্যা ২০ লাখ। মোট ভাতাভোগীর ৯০ শতাংশই এই তিন শ্রেণির।

অন্যানের মধ্যে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তথা জেলে, বেদে, হিজড়া সম্প্রদায়, চা-শ্রমিকদেরও নগদ ভাতা দেয়া হয়।

এ ছাড়া দুস্থ নারীদের জন্য চালু আছে মাতৃত্বকালীন ভাতা, যা দেখভাল করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই ভাতা বর্তমানে ৮০০ টাকা।

মুক্তিযোদ্ধাদেরও মাসিক ভাতা দেয় সরকার। বর্তমানে প্রায় ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পান।

মাসিক ভাতার বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে সমাজকল্যাণ, ত্রাণ-দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ ৩০টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন।

পেনশন সুবিধাকেও এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদিও এটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার রেশন ব্যবস্থা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, জেনারেল রিলিফ, শিক্ষাবৃত্তি, কম দামে গরিবকে চাল বিতরণ, ভিজিডি, ভিজিএফ ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে টার্গেট গ্রুপকে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে।

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষায় মোট ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় তা মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ২ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ -৯৭ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করে। তখন ভাতা ছিল ১০০ টাকা।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অসমতা ও দারিদ্র্য দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতেই হবে। এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। এখনও জিডিপির ২ শতাংশের কম বরাদ্দ দেয়া হয়। এটি অন্তত ৩-৪ শতাংশে উন্নীত করা উচিত।’

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে খরচের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার নিচের দিককার পাঁচটি দেশের একটি। বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভুটান ও লাওস। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম।

এশিয়ার ২৫টি দেশের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ‘দ্য সোশ্যাল প্রোটেকশন ইন্ডিকেটর ফর এশিয়া: অ্যাসেসিং প্রোগ্রেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত বছর এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ পরিমাণ অর্থসামাজিক সুরক্ষায় খরচ করে বাংলাদেশ। তালিকার শীর্ষে থাকার জাপান খরচ করে জিডিপির ২১ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি সুরক্ষা পান। আবার সামাজিক সুরক্ষার জন্য গরিব মানুষের পেছনে যতটা খরচ হয়, এর চার গুণ বেশি খরচ হয় ধনীদের পেছনে।

চলতি অর্থবছর ৫৭ লাখ উপকারভোগী বয়স্ক ভাতা পান। আগামী অর্থবছর এ সংখ্যা আরও ১১ লাখ করা হচ্ছে। ফলে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা হবে ৬৮ লাখ। উপকারভোগী বাড়ার কারণে আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়বে ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বাজেটে বয়স্ক ভাতার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা।

বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

আরবিসি/২৭ মে/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category