• বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
বিয়ে করে আলোচনায় অদিতি-সিদ্ধার্থ হাসপাতাল থেকে বাসায় খালেদা জিয়া গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদদের নিয়ে মামলার নামে ব্যবসা শুরু হয়েছে: সারজিস রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে ডামি ফুয়েল লোডিং শুরু করোনার অতি-সংক্রামক নতুন ধরন শনাক্ত, ছড়িয়েছে ২৭ দেশে আগামী শুক্রবার থেকে সপ্তাহে সাতদিনই চলবে মেট্রোরেল সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, যা বললেন জনপ্রশাসন সচিব ‘আওয়ামীলীগ এতিমের বাচ্চা হয়ে গেছে’ সংস্কার শেষে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে: রাজশাহীতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যোগদানের আড়াই ঘন্টা পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন রাজশাহী কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ

লিচুতে রঙিন রাজশাহী

রোজিনা সুলতানা রোজি / ৪০৮ Time View
Update : শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২

গত এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে রাজশাহীর বাজার রঙিন করে রেখেছে লিচু। রাজশাহীতে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে লিচুর বাগান।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৫১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। বর্তমানে রাজশাহীর বাজার গুটিজাতের লিচুর দখলে রয়েছে। রাজশাহীতে এবার ৩ হাজার ১৪৪ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৪৪ কোটির বেশী টাকার লিচুর বাণিজ্য ব্যবসা হওয়ার আশা করছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
রাজশাহী কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার লিচুর উৎপাদন বেশ কিছুটা বেড়েছে।

ফলনও গত বছরের চেয়ে অনেকটা ভালো। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় গতবার গাছে লিচু কম ধরেছিল। তাই এ বছর প্রাকৃতিকভাবেই লিচু ধরেছে অনেক বেশি। আর গত বছর লিচুর ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানা বৈরী আবহাওয়া থাকায় ফলন কিছুটা ছিলো কম।

ফল গবেষকরা বলছেন, লিচুর ফুলের পরাগায়নের সময় তাপমাত্রা কম থাকা প্রয়োজন। কিন্তু গত বছর শীতের শেষে হঠাৎ গরম পড়ে যায়। গত বছর হঠাৎ একটানা কয়েকদিন ভোরে কুয়াশা পড়ে। ফলে পরাগায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার কিছুদিন পর চলে খরা। এতে গুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উৎপাদন কম হয় লিচুর। তবে এবার শুরু থেকেই অনুকুল অঅবহাওয়ার কারনে গাছে লিচুর মুকুল বেশি এসেছিল। এজন্য গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, লিচুর ভালো পরাগায়নের জন্য ১২০ ঘণ্টা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কম তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এবারও হঠাৎ করেই শীতের পর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ফলে মাঠ পর্যায়ে পরিচর্যার কারণে এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ফলন এবার অনেকটা ভালো।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর ২টি থানা এলাকায় কমবেশি লিচু চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ হয় জেলার বাগমারা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাগমরায় ১১৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৬৯০ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এছাড়া জেলার পবায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৪৫৫ মেট্রিকটন, দুর্গাপুরে ৭০ হেক্টর জমিতে ৪২১ মেট্রিকটন (, পুঠিয়ায় ৬৬ হেক্টর জমিতে ৩৯৩ মেট্রিকটন, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর জমিতে ৩১০ মেট্রিকটন, চারঘাটে ৪৫ হেক্টর জমিতে ২৭২ মেট্রিকটন, তানোরে ৩০ হেক্টর জমিতে ১৭৬ মেট্রিকটন, বাঘায় ২১ হেক্টর জমিতে ১২৬ মেট্রিকটন, মহানগরীর মতিহারে ২১ হেক্টর জমিতে ১২৫ মেট্রিকটন এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ১০ হেক্টর জমিতে ৫৯ মেট্রিকটন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর ছোটবনগ্রাম, রায়পাড়া, পুঠিয়ার ঝলমোলিয়াসহ কয়েকটি এলাকার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, লিচুগাছে লিচু পেকে গোলাপী রং ধারণ করেছে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধুই লিচু। সেই লিচু এখন ছড়িয়েছে রাজশাহীর বাজারে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার লিচুর দামও রয়ছে নাগালের মধ্যে।
লিচু চাষিরা জানিয়েছেন, রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসাবে বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বোম্বাই লিচুর আকর্ষণ বেশি। সবচেয়ে বেশি গাছ রয়েছে বোম্বাই লিচুরই। মহানগরীর রায়পাড়া এলাকার লিচুচাষি আবদুল গাফ্ফার বলেন, গত বছর যেমন ইজারা নেওয়া বাগানে ক্ষতি হয়েছে এবার সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব।

রাজশাহীর পবা উপজেলার কসবা গ্রামের লিচুচাষি আরিফুল ইসলাম জানান, তার বাগানেরও অবস্থা এবার অনেকটা ভালো। গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে বোম্বাই লিচু দেখে মনে ভরে উঠছে। কয়েকদিনের মধ্যেই লিচুগুলো নামানো যাবে। বাগানে যে পরিমাণ লিচু আছে তাতে হয়তো এবার গতবছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে রাজশাহীর বাজার এখন লিচুর দখলে। এখনো সেইভাবে আম বাজার দখল করতে পারেনি। তাই সর্বত্র লিচু বিক্রি করছে। নগরীর অলিগলিতেও ফেরি করে লিচু বিক্রি হচ্ছে। নগরীর সাহেব বাজারে লিচু কিনতে আসা কুমারপাড়া এলাকার ইউসুফ বলেন, ‘১০০ লিচুর দাম এখন ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। নগরীর লিচু ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেন, ‘এখন শহরের মধ্যেই দেশি জাতের লিচুগুলো বাজারে বিক্রি করছি। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে বোম্বাই লিচু আসবে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘লিচুর এমন একটি ফল যা মানুষকে আকর্ষণ করবেই। তাই এই ফলে খুব একটা লোকসান হয় না। তবে কোন মৌসুমে ফলন একটু কম আবার কোনো মৌসুমে বেশি হয়। তবে প্রতিবছর রাজশাহীতে লিচুর বাগান বাড়ছে। চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ বেশি হয়েছে। তুলনামূলকভাবে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা বেশি।

আরবিসি/২০ মে/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category