স্টাফ রিপোর্টার : আমের রাজধানী রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমের পাকা আম পাড়া শুরু হয়েছে। প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে শুরুর দিন গুটি জাতের কিচু আম পেড়েছেন চাষিরা। এর মধ্যে দিয়েই আম আম পাড়ার (ক্রয়-বিক্রয়) মহৌৎসব শুরু হয়েছে।
করোনা মহামারীর ভয় কাটিয়ে এবার ব্যবসায়ীরাও আটঘাট বেধেই প্রস্তুতি নিয়েছেন আম ক্রয়-বিক্রয়ের। সেই সঙ্গে রাজশাহী জেলা প্রশাসনও ইতিমধ্যে আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহীতে এবার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিকটন (হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.৬০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের বিকিকিনি হওয়ার আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির আমবাগানে গাছে গাছে ঝুলছে আম। এরই মধ্যে পাক ধরেছে গুটি জাতের আমে। শুক্রবার থেকে বাজারেও উঠেছে এসব আম।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে- গত বছরের তুলনায় রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজিন হওয়ায় রাজশাহীর আমবাগানগুলোর গাছে মুকুল কম আসায় আমের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। তবে গত বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাসের কারণে আমচাষিরা ন্যায্য মূল্য পায়নি।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯ শত ৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। আর গেল মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিকটন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদফতর। সেই হিসাব অনুযায়ী, গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। আর চলতি মৌসুমে তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হলেও আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিকটন।
কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে, এবার প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সেই অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও মহানগরীর ২টি থানা এলাকায় কমবেশি আমের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার বাঘা উপজেলায়। চলতি মৌসুমে বাঘায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এই উপজেলা থেকেই ৯৬ হাজার ৮৪১ মেট্রিকটন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১১.৩০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এছাড়া জেলার চারঘাটে ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ৪৪ হাজার ২৮৪ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১১.৪০ মেট্রিকটন), পুঠিয়ায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৫১৩ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিকটন), গোদাগাড়ীতে ১২২০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৮২৩ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), পবায় ৯২০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ১৭৮ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), দুর্গাপুরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৭০ মেট্রিকটন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১২.২০ মেট্রিকটন), বাগমারায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৮৬৪.৭৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৫ মেট্রিকটন), মোহনপুরে ৪০৭ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৯৫৩.১৯ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৭ মেট্রিকটন), তানোরে ৩৬০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩২৬ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.০২ মেট্রিকটন), মহানগরীর মতিহারে ১৩৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৬৪১ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১৬ মেট্রিকটন) এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৭৩ হেক্টর জমিতে ৮৮৩.৩০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.১০ মেট্রিকটন) আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজশাহীতে শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানোর তারিখ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আমের বাণিজ্য।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ‘শুক্রবার থেকে গুটিজাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। এছাড়া ভোপালভোগ ২০ মে, লক্ষণভোগ, ২৫ মে, রাণী পছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বিনা ও বারি ফোর ১০ জুলাই, গৌড়মতি ১৫ জুলাই এবং ইলামতি জাতের আম ২০ আগস্ট নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বেধে দেয়া তারিখের আগে কোনো আমচাষি আম নামালে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফরমালিনমুক্ত আম যাতে বাজারজাত নিশ্চিত হয় এজন্য জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান টিম সব সময় মনিটরিং করবে।’
আরবিসি/১৩ মে/ রোজি