• সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

ঈদের দিনের বৃস্টিতে ভাসছে কৃষকের ধান

Reporter Name / ১৫৫ Time View
Update : শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : বরেন্দ্র অঞ্চলের উচু-নিচু ঢেউ খেলানো ভূমি হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামেক কৃষক মাসুম আলী। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। খরচা-পাতি করে তার ক্ষেতের ধানের মাথা বেশ ভালই ছিল।

বাম্পার ফলন হবে এমন আশায় স্বপ্নর বুনেছিলেন মনের মধ্যে। কৃষিশ্রমিক সংকটের কারণে নিজের ছোট ভাই ও কৃষক বাবাকে নিয়ে ঈদের দুই দিন আগে তার দুই বিঘার ধান কেটে রেখে ছিলেন ক্ষেতে। ঈদের পরের দিন উঠানে তুলবেন স্বপ্নের সোনালী ধান।
কিন্ত ঈদের সকালের ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে স্বপ্নে ভরাডুবি হয়েছে। ক্ষেতের দুই বিঘা কাটা ধান হাটু পানিতে ভাসছে। এ অবস্থায় তিনি ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

ক্ষেতে বোরো ধান নিয়ে এমন বিপদে শুধু রাজশাহীর মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মাসুম আলী একাই নয়, বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় অনেক জায়গায় কালবৈশাখীর টান্ডবে কৃষক মাসুম আলীর মত হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্নে চলতি বছর ভরাডুবি হয়েছে মনে করছে কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। এতে ফলন কমে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশস্কায় কৃষকেরা।
গত এক সপ্তহে এ অঞ্চলে কয়েকবার কালবৈশাখী টান্ডব চালিয়েছে। এতে করে বোরোর পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ঈদে দিন-রাত চলে ঝড়োহাওয়া ও ব্যাপক বৃষ্টি।

এতে করে বরেন্দ্র অঞ্চলে ক্ষেতে পাকা ধান মাটির সাথে হেলে পড়েছে। অনেকের কাটা ধানের উপর দিয়ে পানির স্্েরাত চলছে। এমনিতে কৃষিশ্রমিক সংকট এর মধ্যে কালবৈশাখীর এমন টান্ডবে ক্ষেতে পাকা ধান নিয়ে শ্রমিক সংকটে ঘরে ধান তুলা নিয়ে হায়াকার শুরু হয়েছে।
এছাড়াও রাজশাহীর তানোরের শিবনদী ও নওগাঁর মান্দা উপজেলায় বিলগুলোর নিম্নঞ্চলে অনেক এলাকায় কয়েক হাজার হেক্টর বোরো পাঁকা ধান তলিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বরেন্দ্রে কৃষকেরা জানান,এখন চলছে বোরো-কাটা মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম। এমনতেই কৃষিশ্রমিকের সংকট। এমন সময় কালবৈশাখীর ঝড়হাওয়া ও বৃষ্টিতে ধান হেলে পড়েছে। দ্রত ধান উঠানে তুলতে না পারলে ক্ষেতের ধানে টেক/গাছ বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এমনটা হলে ধানের ফলন তো কমবে এর সাথে মুল্য কমে গিয়ে কৃষকেরা লোকসানে পড়বে।
রাজশাহী অঞ্চলে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে বোরো আবাদ। বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ক্ষেতে ধানের মাথা ভাল থাকায় কৃষকেরা স্বপ্নের প্রহর গুনছিল। কিন্ত কালবৈশাখী কৃষকদের স্বপ্নদুরস্বপ্নতে পরিণত করতে চলেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী ৬৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দাম ভাল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৯৮৫ হেক্টর (প্রায় ৩৭ হাজার বিঘা) বেশী জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবারে ৭২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগা,নাটোর,চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার আবাদ হচ্ছে আরো সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমিতে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রকাশনগর গ্রামের কৃষক সামসুজোহা জানান,তিনি এবার ২৮ বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন। একসপ্তাহের আগেই তার ক্ষেতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার কালবৈশাখীর তান্ডবের কারণে ক্ষেতের ধান মাটি হেলে পড়েছে। এসব হেলে পড়া ধানে রংঙ কালো দাগ হয়ে যাবে। আর ক্ষেতে কেটে রাখা ধানের উপর দিয়ে পানির স্রোত বয়ছে। এখন আধা-আধি ধান না দিলে শ্রমিক মিলবে কিনা সে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বলে জানান তিনি।

তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার কয়েক জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন,কালবৈশাখী কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের কিছু ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। দ্রত এসব ধান কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। দেরি হলে ধানে গাছ বের হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে কৃষকেরা লোকসানে পড়তে পারে।

তারা আরো বলেন,বরেন্দ্র অঞ্চলে শুরুতেই কৃষিশ্রমিক সংকট ছিল। গত কয়দিন আবহাওয়া ভাল থাকলে শ্রমিক সংকট থাকবেনা। কারণ অন্য জেলা থেকে প্রতি বছর কৃষিশ্রমিক আসে। এবারও অনেক শ্রমিক এসে পড়বে।

তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন,ঈদের তিন দিন আগেই কৃষকদের সচতেন করতে ম্যাসেজ দেয়া হয়েছিল। ঈদের দিন বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া হতে পারে বলে। অকেন কৃষক তা আমলে নেন নাই। তবে ঈদের দিন ঝড়ো হাওয়া বৃষ্টি হয়েছে এতে বোরো ধানের কিছুটা ফলন কমতে পারে বলে জানান তিনি।

আরবিসি/০৬ মে/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category