আরবিসি ডেস্ক : গত ৩০ এপ্রিল ইলিশ ধরার ওপর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। এই সময়ে বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ থাকার কথা, সেটি দেখা যাচ্ছে না। জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও বাজারে দেখা মিলছে না ইলিশের। কারণ, নদীতে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা দিচ্ছে না।
ইলিশ ধরার কাজে যুক্ত জেলেরা বলছেন, এই মৌসুমে স্বাভাবিক নিয়মেই জালে ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও নদীতে ইলিশ নেই। তাই ধরা পড়ছে না। পটুয়াখালীর মহিপুর, বরগুনার পাথরঘাটা, পিরোজপুরের পাড়েরহাট ও ভোলার ইলিশার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, এবছর নদী থেকে সাগরে প্রবেশ করা স্বাদু পানির পরিমাণ কম। পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় পানির যে প্রবাহ থাকার কথা, সেটা আর আগের মতো নেই। ফলে মাছ সাগর থেকে মিঠা পানিতে বা নদীতে আসছে না। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলেরা জানান, পূর্ণিমার সময় যখন জোয়ার বেশি থাকে, তখন ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। তবে সম্প্রতি জোয়ারের সময়ও পানির উচ্চতা গত বছরের মতো বাড়ছে না। জোয়ার এলে পানির উচ্চতা যেমন হওয়া উচিত, তেমন হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে আড়াই বা তিন ফুট কম থাকছে। এটিও ইলিশ মাছ কম ধরা পড়ার অন্যতম কারণ।
জেলেরা বলছেন, বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালকে ইলিশের মৌসুম হিসেবে গণ্য হয়। এ সময়েই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে এবং বাজারেও ইলিশের সরবরাহ বেশি দেখা যায়। সিই হিসেবে এবারের বর্ষাকাল শুরু হতে আরন একমাসেরও বেশি সময় বাকি আছে। তাই তারা আশাবাদী, বর্ষা শুরু হলে জালে অবশ্যই ইলিশ ধরা পড়বে।
ইলিশের গবেষকরা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের চলাচল পথ এবং জীবনচক্রে অল্প-স্বল্প প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেসব কারণেও ইলিশের আগম কম হচ্ছে।
জানতে চাইলে পিরোজপুরের পাড়ের হাটের ইলিশ ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘অনেকটাই অলস বসে আছি। জেলেরা নদীতে গেলেও খালি হাতে ফিরছেন তারা। তবে সামনের বর্ষায় মাছের সরবরাহ বাড়বে বলে আশা করছি।’
ভোলার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে মাছ নেই। সারাদিন পর খালি নৌকা নিয়ে ফিরছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে যে কীভাবে দিন পার করবো, তা আল্লাহই জানেন।’
এ বিষয়ে ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এটি আসলে ইলিশের মৌসুম নয়। জুন-জুলাই মাসে ইলিশ কমই ধরা পড়ে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস হচ্ছে ইলিশ ধরা পড়ার উপযুক্ত সময়। সে সময় যদি ইলিশ কম ধরা পড়ে, তাহলে সেটি হবে চিন্তার কারণ।’
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাত শুরু হলে ইলিশ চলাচল শুরু করে— তাদের অভিবাসনের চলাচলের পথ ধরে। সে সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদী ও সাগরের মোহনা হয়ে প্রজনন ও খাবারের জন্য নদীতে চলে আসে।’ ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়, ডিমের আকার, পরিপুষ্ট ও বড় অবস্থায় ইলিশের চলাচল বাড়ে বলেও জানান তিনি। আসলে আগস্ট থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসই হচ্ছে ইলিশ ধরার মুখ্য সময়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।
আরবিসি/০৬ মে/ রোজি