• সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

আরআইবি’র অধিভূক্ত নবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত

Reporter Name / ৯৮ Time View
Update : সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের স্বেচ্ছাচারিতা, অসঙ্গতি আর নানা অনিয়মের কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অধিভূক্ত রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব বায়োসায়েন্সেস (আরআইবি) এর অধিভূক্তি ও পরীক্ষাকেন্দ্র নবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত পহেলা এপ্রিল অনুষ্ঠিত রাবির ৫০৭ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজ পরিদর্শন দপ্তরের এক চিঠিতে আরআইবি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

বিশ^বিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন দপ্তরের ওই চিঠিসূত্রে জানা গেছে, আগামী দুই বছরের (২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩শিক্ষাবর্ষ) জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো বন্ধ থাকবে। এছাড়া ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ইং শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকবে তবে রাবির সংশ্লিষ্ট অনুষদ ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাবি’র অধীনে আরআইবি ২০১৯-২০ইং শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি বিষয়ে (বিএসসি-এজি অনার্স ইন এগ্রিকালচার, বিএসসি অনার্স ইন ফিশারীজ, বিএসসি অনার্স ইন মাইক্রোবায়োলজি এবং বিএসসি অনার্স ইন ফুড এন্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স) শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির একটি বড় অসঙ্গতি হলো- গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আরআইবি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে বিধিবহির্ভূতভাবে পরিচালনা পর্ষদের এক সভা আহ্বান করা হয়। সভায় অবৈধভাবে রাবির সাবেক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী অধ্যক্ষ ড. হাফিজুর রহমানকে বাদ দিয়ে অবৈধভাবে ড. মো. হাবিবুর রহমান নামের একজনকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেন অবৈধ চেয়ারম্যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- রাবি অধিভূক্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. এম. মনজুর হোসেনের আহ্বানকৃত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী- ইনস্টিটিউট গভর্নিং বডির কোনো সিদ্ধান্ত বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু ইনস্টিটিউটের অন্য সব অংশিদারকে না জানিয়েই ড. এম. মনজুর হোসেন গত ২৪ সেপ্টেম্বর কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিজেই সভা আহ্বান করে তার সভাপতিত্বেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন। অনোনুমোদিত (অবৈধ) চেয়ারম্যান ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. হাফিজুর রহমানকে অনৈতিকভাবে সরিয়ে তার স্থলে ড. মো. হাবিবুর রহমান নামের একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। এই দুই অবৈধ চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ নতুন ব্যাংক হিসাব খুলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ভর্তি ও সেমিস্টার ফি বাবদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা আদায় করেন। সেখান থেকে প্রায় ২৯ লাখ টাকা বিধিবহির্ভুতভাবে (বিশ^বিদ্যালয় অনুমোদিত চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ নয়) ওই ব্যাংক হিসেব থেকে উত্তোলণ করেন।

এদিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ বরাবর উক্ত অনৈতিক কর্মকর্তাণ্ডের ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২০ এপ্রিল একটি লিগ্যাল নোটিশ (উকিল নোটিশ) প্রেরণ করেন। যা সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যেই পেয়েও গেছেন।
জানতে চাইলে আরআইবি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মোট শিক্ষার্থীসংখ্যা এবং শিক্ষার মানের দিক বিবেচনায় ইনস্টিটিউটটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেরা এবং দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অধিভূক্তি ও পরীক্ষা কেন্দ্র নবায়ন স্থগিতের বিষয়টি জানতে পেরেছি। করোনাকালীন মহামারিতে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। কিন্তু কিছু অনিয়ম-অসঙ্গতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির অধিভূক্তি ও পরীক্ষাকেন্দ্র নবায়ন স্থগিত করেছে রাবি কর্তৃপক্ষ। আশা করছি, দ্রুতই আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠানটির সকল জটিলতা নিরসন হয়ে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।’

এ ব্যাপারে আরআইবি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পরিচালক ড. এফ.এম আলী হায়দার বলেন, ‘একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের স্বেচ্ছাচারিতায় ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে নিজের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানটির আজ এই বেহাল দশা। ইনস্টিটিউটের অধিভূক্ত ও পরীক্ষাকেন্দ্র নবায়ন বহাল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমি ইতোমধ্যেই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।’
জানতে চাইলে আরআইবি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ড. মনজুর হোসেন আমাকে জোর করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব দিয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ ব্যাংক হিসেব থেকে যে টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখা আছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উকিল নোটিশ পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটির জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো।’

স্বেচ্ছারিতা ও বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন, ‘পূর্বের চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে আমি সভা আহ্বান করেছিলাম মাত্র। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’ প্রতিষ্ঠানটির অধিভূক্তি ও পরীক্ষা কেন্দ্র নবায়ন স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে অন্য কথা বলেন।

জানতে চাইলে রাবির কলেজ পরিদর্শন দপ্তরের পরদর্শক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল গনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কিছু বিষয়ে অসঙ্গতির কারণে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিভূক্ত ও পরীক্ষা কেন্দ্র নবায়ন আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।’ গভর্নিং বডির অনুমোদন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান গভর্নিং বডি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত নয় এবং অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রতিনিধির সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

আরবিসি/২৫ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category