• সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন রাবি ক্যাম্পাস

Reporter Name / ৫৬৯ Time View
Update : শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

রাবি প্রতিনিধি: পলাশ আর শিমুলের বসন্ত শেষে প্রকৃতিতে এসেছে গ্রীষ্ম। কাঠফাটা রোদ আর গরমের জন্য গ্রীষ্মের খ্যাতি থাকলেও দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে প্রকৃতি সাজাতেও এই ঋতুর জুড়ি নেই। এজন্যই বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হলেও অনেকের চোখে গ্রীষ্ম হচ্ছে পুষ্প উৎসবের ঋতু। এই গ্রীষ্মের ফুল হিসেবে রাধাচূড়া, সোনালু বা জারুল ফুলের সৌন্দর্যও কম নয়। তবে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উদ্ভাসের কাছে যেন ফিকে হয়ে যায় অন্য সব ফুলের রং।

তাইতো কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য বুঝাতে কবিগুরু লিখেছেন, ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উরে তোমার উত্তরী কর্ণে, তেমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী।’

তপ্ত গ্রীষ্মে প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়তে শুরু করে, কৃষ্ণচূড়া তখন জানিয়ে দেয় তার আগমন বার্তা। ঠিক তেমনিভাবে গ্রীষ্মের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের ভাঁজে ভাঁজে এখন ডানা মেলেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। দেখে মনে হয় এ যেন কৃষ্ণচূড়ায় রাঙানো ক্যাম্পাস। সূর্যের সবটুকু উত্তাপ যেন কেড়ে নিয়েছে রক্তলাল এই কৃষ্ণচূড়া। দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছগুলোতে যেন আগুন লেগেছে।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ্দুরের মাঝে কখনও দমকা হাওয়ায় দোল খাচ্ছে নজর করা এসব ফুল। যা চলতি পথে হঠাৎ করে পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতনা। মন ছুঁয়ে রঙিন দৃষ্টিতে অবাক হয়ে সে সৌন্দর্য উপভোগ করছে সবাই। এমনই নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়া ফুলের মায়ায় জড়িয়েছে মহিহারের সবুজ চত্বর খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ক্যাম্পাস।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া এলাকায় তাপসী রাবেয়া হল ফটকের ডানে ডালপালা ছড়ানো কৃষ্ণচূড়াগাছটির শাখায় শাখায় রক্তবর্ণ ফুলের সমাহার। এছাড়া রোকেয়া হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলসহ মেয়েদের প্রায় প্রতিটি হলের সামনের ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারের সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, পথচারী বা যেকোনো যাত্রীরই হৃদয় কাড়ছে নয়ন জুড়ানো আরেকটি লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ। যা দেখে মনের অজান্তেই মুখে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে আসে ‘বাহ! কী মায়াবী জাল বিস্তার করেছে আকাশের পানে।’
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের সামনে, পরিবাহন মার্কেটে এনামুল ভাইয়ের চায়ের দোকানের উপরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং পূর্বপাড়া

মসজিদের সামনের রাস্তার ধারে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে এবং চারুকলা চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রঙ ছড়াচ্ছে চোখ জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া।

এসব কৃষ্ণচূড়া ফুলগাছের দিকে তাকালে যেন গাছগুলোতে আগুন লেগেছে বলে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুনের। তিনি বলেন, গ্রীষ্মের শুরুতেই প্রিয় ক্যাম্পাস যেন লাল রঙে ছেয়ে গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে এ যেন কৃষ্ণচূড়ার এক বৃহৎ আড্ডাস্থল। আর সূর্যের সবটুকু উত্তাপ কেড়ে নিয়েছে টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া। রাজশাহীর প্রখর রোদে পুড়ে জানান দিচ্ছে তার সৌন্দর্যের বার্তা। প্রকৃতিতে নীল আকাশের ক্যানভাসে জ্বলছে গাঢ় রক্তিম রঙ, এ যেন লাল রঙের এক মায়াবী ক্যানভাস।

কৃষ্ণচূড়াকে আমরা মূলত লাল রঙে দেখতেই অভ্যস্ত হলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিন রঙের হয়ে থাকে। লাল, হলুদ ও সাদা। এটি একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত এই বৃক্ষটি গুলমোহর নামেও পরিচিত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। যা প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। ভারতবর্ষে এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন।

আরবিসি/২২ এপ্রিল/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category