আরবিসি ডেস্ক : সরকার কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেই বিদ্যুতের দাম নিয়ে সাধারণ গ্রাহককে এই মুহূর্তে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েল ও কয়লার ওপর আরোপিত কর কমানোর পাশাপাশি ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তা বাস্তবায়ন না হলে বাড়তি কর ও উৎপাদন খরচের টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে সমন্বয় করতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্প, কৃষি ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে। যা মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেবে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে নতুন আরোপিত করে ছাড় দিলেই বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষ করে ফার্নেস অয়েল ও কয়লার ক্ষেত্রে এমনটা মনে করছেন পিডিবি কর্মকর্তারা।
পিডিবি এক চিঠিতে বলছে, আমদানিকৃত ফার্নেস অয়েলে ৩৪ ভাগ শুল্ক ও করাদি এবং কয়লার ওপর ৫ ভাগ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানিতে কর ছিল না। এখন গ্যাসের ঘাটতি থাকায় ফার্নেস অয়েল ও কয়লাকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ দুটি জ্বালানিতে কর বাড়ানো হলে স্বভাবতই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে।
পিডিবি দাবি করছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য ২০১৯ সালের অক্টোবর হতে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন ঘাটতিও নেই। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। এতেও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায়।
তাই সব মিলিয়ে আরেক দফা দাম বাড়ানো হলে এই স্বস্তি কতদিন থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত অনেকে।
পিডিবি সূত্র জানায়, গ্যাস ও কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ক্রয়ের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ, গ্যাসের ডিমান্ড চার্জ, পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির ওপর ৬ ভাগ উৎসে করারোপ করায় বাল্ক বিদ্যুৎ ট্যারিফের সরবরাহ ব্যয় বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল), ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) ও নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল)-এর সঙ্গে পিডিবির চুক্তির কারণে ৬ ভাগ অতিরিক্ত ব্যয় হবে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার এটিও আরেকটি কারণ।
পিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সরকার কর ধার্য করলে সেটা আমাদের দিতেই হয়। এখন এই কর আমরা কীভাবে দেবো? অবশ্যই গ্রাহককে এই করের দায় নিতে হয়। না হয় উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। কিন্তু সরকার যে পরিমাণ কর নেয় তার খুব সামান্যই ভর্তুকি দেয়। এজন্যই দাম বাড়াতে হয়।
এখন দেশে ৫ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েল-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াটের কয়লাচালিত কেন্দ্র রয়েছে।
গ্যাস সংকটের কারণে ফার্নেস অয়েলের ওপর নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। দেশের বড় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট দিয়েই এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘ফার্নেস অয়েল ও কয়লার কর কমিয়ে সরকারের উচিত রাজস্ব আয় কিছুটা কমানো। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমাতে হবে। সরকারের ভর্তুকিও বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের কাজে লাগে না, সেগুলো অপচয়। সেগুলো বাদ দিতে হবে। সেগুলোর পেছনে সরকার যে বাড়তি খরচ করছে তার ব্যয় জনগণ বহন করবে না।’
আরবিসি/১৯ এপ্রিল/ রোজি