আরবিসি ডেস্ক : এই ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে এমন কিছু করবেন, এর বিরুদ্ধে বাজি ধরার মতো ভুল করেছিলেন কী কেউ?
লিগ কাপ থেকে বাদ পড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বাদ পড়েছে এফএ কাপ থেকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে হেরে ছিটকে পড়েছে শেষ ষোলো থেকে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতার স্বপ্ন তো মাঝ মৌসুমের আগেই শেষ। এমনকি সেরা চারের মধ্যে থেকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। দলীয় এই ব্যর্থতার দায় কিছুটা হলেও রোনালদোর ঘাড়ে পড়েছে। সে সঙ্গে ব্যক্তিগত সমস্যাও যোগ হয়েছে।
গত সপ্তাহে এভারটনের মাঠে হারের পর বেড়িয়ে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষ সমর্থকের হাত থেকে মোবাইল ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তাতে ভেঙেছে ফোন, আঘাত পেয়েছেন সেই ১৪ বছর বয়সী সেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর। তুমুল সমালোচনা চলছে, চলছে পুলিশের তদন্তও।
ওদিকে খবর এসেছে, আগামী মৌসুমে ইউনাইটেডের কোচের দায়িত্ব নেবেন বলে যাঁর নাম শোনা যাচ্ছে, সেই এরিক টেন হাগ নাকি রোনালদোকে দলে দেখতে চান না। মাঠে ও মাঠের বাইরে এমন সমালোচনা মানেই তো রোনালদোর কিছু করে দেখানোর সময়। সেটাই করে দেখিয়েছেন। তাঁর হ্যাটট্রিকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নরউইচের বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয় পেয়েছে ইউনাইটেড।
লিগের সবার নিচে থাকা দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ। এমন ম্যাচেও প্রমাণ করার কিছু ছিল রোনালদোর। ম্যাচের আগের ঘটনা যদি ভুলেও থাকেন, নরউইচ সমর্থকেরা তাঁকে খোঁচা দিয়ে জাগিয়ে তুললেন। ম্যাচের শুরুতে তাঁকে শুনতে হয়েছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে, নিজ ঘরে!
জবাব দিতে খুব বেশি সময় নেননি। দায়টা নরউইচের। নিজের রক্ষণে পায়ের কারুকাজ দেখাতে চেয়েছিল নরউইচ রক্ষণ। অ্যান্থনির এলাঙ্গার প্রেসের সামনে ভুল করে বসলেন গিবসন। ইউনাইটেড উইঙ্গারের পাস ফাঁকায় পেয়ে গেল রোনালদোকে। ফাঁকা পোস্টে আলতো এক শটেই কাজ সারতে পারতেন, কিন্তু ডান পায়ের গোলায় যেন রাগটাও ঝাড়লেন।
৭ মিনিটের গোলটিতে যদি ভাগ্যের অবদান থাকে, দ্বিতীয় গোলের পুরোটাই দক্ষতার। ৩২ মিনিটে কর্নার থেকে বক্সে বল ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন অ্যালেক্স তেয়েস। গায়ের সঙ্গে সেটে থাকা গিবসনকে ছাপিয়ে লাফ দিলেন রোনালদো। তাঁর ট্রেডমার্ক হেডে ২-০ গোলে এগিয়ে গেল ইউনাইটেড।
প্রথমার্ধের শেষ ও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে টিমো পুক্কি রোনালদোর সে হাসি কেড়ে নিয়েছিলেন। যোগ করা সময়ে পুক্কির ক্রস থেকে হেডে ব্যবধান কমিয়ে আনেন কিয়েরান ডোয়েল। ৫২ মিনিটে ডোয়েলের পাস থেকেই সমতা ফেরান পুক্কি। ডোয়েল চমৎকার থ্রু বলে ইউনাইটেড রক্ষণ ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। তিন মিনিট পর এগিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পেয়েছিল নরউইচ। কিন্তু দাভিদ ডে হেয়া সে যাত্রা দলকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
৭৩ মিনিটে পল পগবার বদলে মাঠে নামেন হুয়ান মাতা। ম্যাচের গতিও বদলে যায়। মাতার বুদ্ধিদীপ্ত দৌড়ে নরউইচ রক্ষণ হতবুদ্ধ হয়ে পড়ছিল। ৭৫ মিনিটেই মিলল ফল। এলাঙ্গাকে বক্সের কাছে ফাউল করা হয়েছিল। ফ্রি কিক নিতে এগিয়ে এসেছিলেন রোনালদো। এক সময় এই দৃশ্য গোলকিপারদের মনে ভয় জাগালেও ইদানীং তেমনটা আর নয়। শেষ কবে রোনালদো ফ্রি কিক থেকে গোল করেছেন সেটা যে ভুলেই গিয়েছেন অনেক।
কিন্তু আজ যে রোনালদো নিজেকে আবার প্রমাণ করতে নেমেছেন। বহুদিন পর ফ্রি-কিকে সেই রোনালদো ফিরেছেন। ডান পা থেকে বের হলো এক গোলা। নরউইচের গোলকিপার টিম ক্রুল দুই হাত দিয়ে সেটা ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন, হাতেও লাগিয়েছেন সে বল। কিন্তু গোলা আটকাতে সেটা যথেষ্ট হয়নি। ঠিকই জালে ঢুকেছে সে বল। হ্যাটট্রিক।
আরবিসি/১৬ এপ্রিল/ রেজি