স্টাফ রিপোর্টার : শেষ চৈত্রের খরতাপে তেঁতে উঠেছে রাজশাহীর পথঘাট। বাইরে বের হলেই যেন আগুন ঝরছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে এরইমধ্যে। দুর্বিষহ গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের বোরো ধান। তীর্যক সূর্যদহনে ত্রাহি অবস্থা এখন পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। বাতাসেও ছড়াচ্ছে তাপ।
ক্রমাগত গরমে হাঁসফাঁস করছেন রাজশাহীর মানুষ। টানা তাপদাহেই হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণিকূলও। এরই মধ্যে লু-হাওয়া বইছে এখানে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপমাত্রা। তবে শেষ চৈত্রের অস্বস্তিকর এই খরায় শহর ও গ্রামের দিনমজুর, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রাণবায়ু যেন যায় যায় অবস্থা। আর এই দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে ঘরে বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা; ওপর থেকে যেন আগুনই নামছে! গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে। একদিকে তাপদাহ আরেক দিকে গরম বাতাস।
বুধবার দুপুরের পর রাজশাহী সড়ক-পথ ঘাট তেতে উঠেছে সূর্যতাপে। এ অবস্থায় এক পশলা বৃষ্টির জন্য সবাই যেন চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে।
আবহাওয়াবীদরা বলছেন, রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখে দেখা যায়। কিন্তু এবার চৈত্রের শুরু থেকেই তেঁতে উঠে প্রকৃতি। রাজশাহী অঞ্চলে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতি রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বেরো ধানে সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর মুকুল।
রাজশাহী আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রাজশাহীর ওপর দিয়ে চৈত্রের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ চলছে। রাজশাহীতে বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৬ মার্চ থেকে রাজশাহীতে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওই দিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর গত ১৯ মার্চ রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর তাপমাত্রা সামান্য কমলেও তা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ওঠানামা করছিল।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাদের টেলিফোন বিকল পাওয়া যায়। তবে বুধবার অনলাইনে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
বিএআরআই উদ্যানতত্ত্ব ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, বিরাজমান আবহাওয়া আম বা লিচুর জন্য ক্ষতিকর নয়। মার্চ মাসে এ ধরণের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা থাকে। তিনি বলেন এক্ষেত্রে আমের গুটিতে স্প্রে করতে হবে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড/কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে নির্দেশিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
আরবিসি/১৩ এপ্রিল/ রোজি