স্টাফ রিপোর্টার : ট্রেন চালকদের কর্মবিরতি শুরু হলেও দুপুরের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বুধবার একবেলায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকেট বিক্রির অন্তত ১২ লাখ টাকা ফেরৎ দিতে হয়েছে। রাজশাহী রেলওয়ে বুকিং অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বুধবার সকালে রাজশাহী স্টেশনের বুকিং অফিসের প্রধান বুকিং সহকারী মো. আব্দুল মোমিন জানান, সকালে মোটামুটি ৯টি ট্রেনের রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে যাত্রা করার কথা ছিল। এগুলোর মধ্যে সাগরদারি, বনলতা, সিল্কসিটি, মধুমতি, কমিউটার, মহানন্দা, চিত্রা, ৬-ডাউন ও ৬ নাম্বার ডাউন। এসব ট্রেনের লোকোমাস্টাররা (ট্রেন চালকরা) আকস্মিকভাবেই কর্মবিরতি বা ধর্মঘটে যাওয়ার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা পর থেকে কাউন্টারে টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হয়।
যাত্রীদের টিকেট ফেরতের বিষয়ে তিনি বলেন দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখনো ২০ শতাংশের মতো টিকিটের টাকা বাকি রয়েছে। তাদেরকে ৭ কর্মদিবসের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে তারা স্টেশনে এসে তাদের ক্রয়কৃত টিকেট ফেরত দিয়ে টিকেটের পুরো টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।
রেল সূত্রে জানা গেছে, লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিইসহ যারা ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন তাদের মাইলেজের অর্থের দাবি ছিল। কয়েক দফায় আন্দোলন ও স্মারকলিপির দাবিতে তা মেনেও নেয় সরকার। কিন্তু তাদের দাবি চাকরি থেকে অবসরের পরও এই মাইলেজের অর্থ প্রদান করতে হবে। এতে সম্মত হয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। আর তাতেই নারাজ ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা।
সারাদেশ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চালকরা কর্মবিরতিতে যান। বুধবার সকাল থেকেই রাজশাহী থেকেও সকল রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যদিও মন্ত্রীর আশ্বাসে দুপুরের পর থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে হঠাৎ কর্মবিরতি শুরুর কারনে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন যাত্রীরা।
রেল সূত্রে জানা গেছে, মালগাড়ি, আন্তনগর ও লোকাল ট্রেনসহ প্রায় ১৩৮টি ট্রেন পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করে। রাজশাহী থেকে ঢাকা, খুলনা, টুঙ্গিপাড়া, ফরিদপুর ও অন্যান্য স্থানের ট্রেনগুলোও বন্ধ করা হয়। হঠাৎ ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীর পথে যাত্রা করা মোতাহারা জাহান নামের এক শিক্ষক বলেন, সকালে আমার পাবনা যাওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল। ভেবেছিলাম সময়মতো ঈশ্বরদী পৌঁছে প্রতিষ্ঠানে যাবো। কিন্তু হঠাৎ ট্রেন বন্ধের কারণে চরম বিপদে পড়েছি।
রাজশাহীর আরডিএ মাকের্টের সাহাবুদ্দিন সাবু নামের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, আসছে ঈদ। ঈদকে ঘিরে আজ ঢাকা থেকে নতুন কিছু পোশাক দোকানে তোলার কথা ছিল। টাকাও কিছু অ্যাডভান্স করেছি। কিন্তু ট্রেনের কারণে যেতে পারলাম না।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, লোকোমাস্টারা যদি তাদের কর্মবিরতির বিষয়ে আগে জানাতেন তাহলে আমরা যাত্রীদের বিষয়টি আগেই জানিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু হঠাৎ করে তারা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুধু যাত্রীরাই ভোগান্তিতে পড়েনি, আমরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজশাহী থেকে সিল্কসিটি আন্তঃনগর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। অন্য ট্রেনেও ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
আরবিসি/১৩ এপ্রিল/ রোজি