স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নিমঘুটু গ্রামে সেচের পানি না পেয়ে আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যায় প্ররোচণাদাতা সাখাওয়াত হোসেনের শাস্তির দাবিতে এবং বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পে বি.এম.ডি.এ’র গভীর নলকূপ পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের প্রতিবাদে গোদাগাড়ীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে।
মঙ্গলবার আদিবাসী পরিষদ ও কৃষক সমিতির আয়োজনে গোদাগাড়ী ডাইংপাড়া গোল চত্ত্বর এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে গোদাগাড়ী কৃষক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কাস পাটির কেন্দ্র কমিটির সদস্য দেবাশিস প্রমানিক দেবু, রাজশাহী জেলা ওয়ার্কাস পাটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, সাধারন সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গণেক মার্ডি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী জেলা সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, নাজমুল করিম অপু, নরেন পাহান, নকুল পাহানসহ আরো অনেকে।
ছাত্র মৈত্রি রাজশাহী জেলার সভাপতি নুরুদ্দিন পান্নার সঞ্চালনায় বক্তারা বিএমডি এর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করে বলেন, গত ২৩ মার্চ বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলাধীন নিমঘুটু আদিবাসী পল্লীর অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে এবং বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের অসদাচারনের ফলে বিষপান করলে ঐ দিনই অভিনাথ মার্ডি মৃত্যু বরণ করেন। আর তার ভাই রবি মার্ডি ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে।
ঘটনার পরে সাখাওয়াত হোসেনের নামে গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা ও অবহেলার দরুন ঘটনার ২ দিন পর ২৫ মার্চ মামলা দায়ের করতে সমর্থ হই।
গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই সেচের পানি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি সেগুলোর কোন তোয়াক্কায় করেন নি।
উপরন্ত সেই গভীর নলকূপের আওতাধীন চাষযোগ্য জমির অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি কৃষকদের দেরীতে পানি প্রদান করা হতো। বিগত ২৩ মার্চ এহেন একটি ঘটনার কারণ পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, আত্মহত্যার পূর্বে অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি প্রায় ১২-১৫ দিন ধরে ধানের জমিতে পানি সেচের কথা নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে বলে আসছিলো কিন্তু তাদের জমিতে পানি প্রদান করা হয় নি।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে নিমঘুটুর আদিবাসী কৃষকের আত্মহননের পেছনে সাখাওয়াত হোসেনের মতো জাতিবিদ্বেষী ও দূর্নীতিবাজ ডীপ অপারেটর যেমন দায়ী ঠিক তেমনি এই বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা বিএমডিএ’র “অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম সমানরূপে দায়ী।
এদিকে এক বক্তা আত্মনাদের শুরে বলেন, কষ্ট নিবেন কষ্ট, কৃষকের কষ্ট। কষ্ট নিবেন কষ্ট, আদিবাসী কৃষকের কষ্ট। তার এ বক্তেব্য ভারী হয়ে উঠে আকাশ বাতাস, মহূর্তেই থমকে যায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত জনতা। তিনি আরো বলেন যে কৃষক ফসর ফলিয়ে সবার মুখে অন্ন তুলে দেয়, সেই কৃষককে ধান ক্ষেতে পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করতে হলো। আত্মহত্যায় প্ররোচণাদাতা ও গভীর নলকুপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের শাস্তিসহ সুবিচার দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ,গত ২৩ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের দুই আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি তাদের ধান খেতে পানি না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পর তোড়পাড় শুরু হলে নলকুপ অপারেটরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়।
আরবিসি/১২ এপ্রিল/ রোজি