আরবিসি ডেস্ক : কুমিল্লা নগরীতে সড়কের পাশে লাগানো নির্বাচনী পোস্টার ছেড়ায় দুই স্কুলছাত্রকে মারধর, হুমকি-ধমকি ও জরিমানা আদায় করেছেন এক কাউন্সিলর প্রার্থী। এ ঘটনায় আতঙ্কিত দুই স্কুলছাত্র বাড়ি থেকে বের হওয়াসহ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাবাহারা দুই স্কুলছাত্রসহ পুরো পরিবার।
সোমবার ওই স্কুলছাত্রদের একজন স্কুল থেকে ফেরার পথে তার পথরোধ করে এই মারপিটের ঘটনা ঘটানো হয়। পরে তাদের বাসায় গিয়ে আরেকজনকে টেনে হিঁচড়ে বের করার চেষ্টা, হুমকি ও পরে জরিমানা আদায় করেন ওই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ কয়েকজন।
নির্যাতনের শিকার ছাত্ররা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলম। তিনি নগরীর তিন নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী।
স্থানীয়রা জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে স্কুলে যাওয়ার সময় দুষ্টুমির ছলে সড়কের পাশে সাঁটানো একটি পোস্টার ছিঁড়ে এক স্কুলছাত্র। ওই পোস্টারটি ছিল সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমের। সোমবার স্কুল থেকে ফেরার পথে তার পথরোধ মারধর ও নির্যাতন করেন ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলমসহ আরও দুজন। এর আগে রোববার একই ঘটনা আরেক স্কুলছাত্রের সঙ্গে ঘটানো হয়।
প্রহারের ফলে পোস্টার ছেড়ার কথা অস্বীকার করে সে তার ভাইয়ের নাম বলে দেয়। পরে তাকে আটকে রেখে মনিরুল আলম ও তার সহযোগীরা তার ভাইকে ধরে নিয়ে আসতে তাদের ভাড়া বাসায় গিয়ে টানাহেঁচড়াসহ হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এমন সময় ওই স্কুলছাত্রদের নানা ভয়ে মনিরুলের কাছে ক্ষমা চান। তখন মনিরুল ছয়টি পোস্টার ছেড়ার অভিযোগ করে তাদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
নির্যাতনের শিকার এক স্কুলছাত্র জানান, স্কুলে যাওয়ার সময় এমনিতেই দুষ্টুমি করে না বুঝে আমি একটি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলি। মনিরুল আলম আমার ভাইকে রাস্তায় ধরে মেরেছে এবং আমাকে ধরে নিতে বাসায় এসে টানাটানি, গালাগাল, হুমকি দিয়েছে। পরে নানাভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা চলে গেছে। পরে আটকে রাখা ভাইকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি ভয়ে আজকেও স্কুলে যাইনি। ভাইও যাচ্ছে না।
ওই ছাত্রদের নানা মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আমার দুটি নাতিই এতিম। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি সব ছেড়ে তাদের সঙ্গে থাকি। আমাদের গ্রামের বাড়ি চান্দিনাতে। তিন বছর আগে একজনের বাবা লিভার সিরোসিসে ও গত বছর আরেকজনের বাবা করোনায় মারা গেছে। পোস্টার ছেড়ায় আমার বড়ো নাতিকে মেরে আটকে রেখে আবার ছোট নাতিকে ধরে নিয়ে যেতে বাসায় এসেছিল মনিরুল আলমসহ কয়েকজন। আমি হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে নাতিদের রক্ষা করেছি এবং তাদের দাবি করা তিন হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রক্ষা পেয়েছি। আমরা অসহায়!
ওই স্কুলছাত্রদের নানী মজলে নুর বেগম বলেন, আমরা খুবই ভয়ের মধ্যে আছি। আমাদের এখানে কেউ নেই। নাতি দুটি ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছে।
মামলা করবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এমনিতেই ভয়ে আছি, কখন আবার কি করে! মামলা করলে নিরাপত্তা দেবে কে! আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
একই কথা বলেন স্কুলছাত্রে মা। তিনি বলেন, আমি বাসায় ছিলাম না। ছেলেকে মেরেছে এবং তিন হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে গেছে। ভয়ে টাকা দিয়ে দিয়েছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিন নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দুই শিক্ষার্থী আমার পোস্টার ও ফেস্টুন ছিঁড়েছে। আমার কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে। সেজন্য বাড়িতে গিয়ে জরিমানা নিয়েছি, মারধর করিনি।
আরবিসি/১২ এপ্রিল/ রোজি