স্টাফ রিপোর্টার : সেচের পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের দুই আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কর্মকর্তাদের শাস্তি হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই কৃষকের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় তিনি মৃত কৃষকের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়াসহ তাদের পরিবারকে সব ধরণের সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সাংসদ দুপুরে নিমঘুটু গ্রামে গিয়ে প্রথমে আত্মহত্যায় মৃত কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে রবি মারান্ডির মা দলিনা মুর্মু ও বড়ভাই সুশীল মারান্ডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মৃতের পরিবারের সবাই অভিযোগ করেন জানান, গভীর নলকূপ থেকে সময়মত পানি না দেওয়ায় রবি ও তার চাচাতো ভাই অভিনাথ বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। তারা এ ঘটনার বিচার চান।
সুশীল মারান্ডি সাংসদকে বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচের অব্যবস্থাপনার পুরো চিত্র তুলে ধরে দাবি করেন, কৃষি জমিতে পানির অভাবে আর কোন কৃষক যেন আত্মহত্যা না করে। এজন্য গভীর নলকূপের পানির সুষম বন্টন হওয়া প্রয়োজন। এ সময় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী আশ^স্ত করেন যে তিনি কৃষকদের পাশে আছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। তাই ওই সময় আসতে পারেননি। তবে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। দেশে এসেই তিনি পরিবার দুটির পাশে ছুটে এসেছেন। সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী এসময় মৃত অভিনাথের দুই নাবালক সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সাথে অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমকেও সহায়তার আশ^াস দেন।
সাংসদ বলেন, গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বহু পুরোনো। এ জন্য স্থানীয় কৃষকেরা অপারেটর বদলের জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে বিএমডিএতে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তিনি দুটি অভিযোগপত্রেই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে সুপারিশ করে দিয়েছিলেন। তারপরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরমধ্যেই কৃষি জমিতে পানি না পেয়ে দুই জন কৃষক আত্মহত্যা করলেন। তাই বিএমডিএ এর দায় এড়াতে পারে না। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার। ফারুক চৌধুরী জানান, আদিবাসীদের কিছু হলে বাইরে থেকে কিছু লোক ছুটে এসে তাদের আশ্বাস দেয় ও পরিবেশ গরম করার চেষ্টা করে। এসময় তিনি স্থানীয়দের বহিরাগতদের থেকে দূরে থাকতে বলেন। তিনি বলেন, আদিবাসীদের না উস্কে উপকার করেন। আদিবাসীদের যত বিপদ আসুক বুক দিয়ে রক্ষা করব। মানুষগুলোকে সাহস দিয়ে চলব।
এদিকে ডিপ অপারেটর সাখাওয়াতের স্ত্রী আরেফিন আরা দাবি করেন, তার স্বামীকে ফঁসানো হয়েছে। তিনিও এই পুরো ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত প্রত্যাশা করেন। আর সুষ্ঠ তদন্ত হলে বোঝা যাবে এর পেছনে কৃষি জমিতে পানির অভাব জড়িত নাকি অন্যকিছু। মৃত দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল বলেও জানান ডিপ অপারেটরের স্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিএমডিএ তার নিয়োগ বাতিল করেছে।
আরবিসি/১০ এপ্রিল/ রোজি