আরবিসি ডেস্ক : টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক কলেজছাত্রী। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশও পাঠানো হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় বিচার না পাওয়া ও প্রাণহানির শঙ্কায় দিন পার করছেন ওই কলেজছাত্রী। মো. মনজুর হোসেন (পরিচিতি নং-১৭৩৩০) বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
স্থানীয় সূত্র ও কলেজছাত্রীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেন দায়িত্ব থাকাকালীন তার সঙ্গে পরিচয় হয় ওই কলেজছাত্রীর। এক পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ওই কলেজছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইল সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান।
কলেজশিক্ষার্থীর অভিযোগে আরও বলা হয়, ইউএনওর বিয়ের আশ্বাসে অন্যত্র বিয়ের সকল প্রস্তাব নাখোশ করে দেন তিনি ও তার পরিবার। এক পর্যায়ে ওই কলেজছাত্রী ও ইউএনও টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজের সাথে পাওয়ার হাউজের পিছনে একটি বাসায় একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে কলেজছাত্রী তাঁকে বিয়ে করে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইউএনওকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পরবর্তীতে তার দুজনে ভারতে যান। ভারত থেকে ফিরে বিয়ে করবেন বলেও আশ্বাস দেন।
গত ২০২১ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি (এসি ল্যান্ডের ব্যবহৃত) গাড়িতে তার পরিচিত জোবায়েত হোসেন, গাড়িচালক বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলের উদ্দেশে রওনা হন। ওই গাড়িচালক ইউএনও, কলেজছাত্রী ও জোবায়েতকে বেলাপোল সীমান্তে নামিয়ে দিয়ে চলে আসেন। পরে গত বছরের ১২ অক্টোবর তারা দেশে ফিরে আসেন। এর আগে ভারতে অবস্থানকালে ইউএনও একাধিকবার ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ইউএনও মনজুর হোসেন ওই কলেজছাত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ায় এর প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন কলেজছাত্রী।
এ বিষয়ে গাড়িচালক বুলবুল হোসেন বলেন, আমি শুধু আমার তৎকালীন বসের হুকুম পালন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ওই কলেজছাত্রীসহ তিন জনকে বেনাপোল সীমান্তে পৌছে দিয়েছি। এর আগেও ওই নারী ইউএনও স্যারের বাস ভবনে এসেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তাঁর কথা শুনে বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন, সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর মা বলেন, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছে না। মেয়েটার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সঠিক বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ইউএনও মনজুর হোসেন এর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে আমি দেখতেছি বলে ফোনটি কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।
বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইল থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করে জানান, একটি মেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আমাকে দেখতে বলেন। আমি ঐ মেয়েটির সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমি আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহানা নাসরিন (রাজস্ব) সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে কে দোষী আর কে দোষী নয়।
আরবিসি/৯ এপ্রিল/মানিক