• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

শস্য ভান্ডারে সবুজের ঢেউ

Reporter Name / ১৩৭ Time View
Update : বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি : দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। নওগাঁয় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কেবলই সবুজের সমারোহ। বসন্ত বাতাসে বোরো ধানের সবুজ ঢেউ সকল কৃষকের মন ভরিয়ে দিচ্ছে।

ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও কাঁচা শীষ। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হবে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। ধানের কাঁচা শীষ দেখে আনন্দে বুক ভরে উঠে কৃষকের মন। যেন হারিয়ে যায় সবুজ মাঠে। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করে তুলেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর বোরো ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯০ হেক্টর বেশি জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর এবং উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৯০ হেক্টর।

চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন হিসেবে ছিল ৮ লক্ষ ১১ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৭১ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন চাল।

জেলায় চলতি মওসুমে হাইব্রীড জাতের মধ্যে হিরা-২, হিরা-৬, এসএল-৮ এইচ, ব্র্যাক হাইব্রীড, তেজ, সিনজেন্টা ১২০৩, চমক, এমএস-১সহ প্রায় ২৬ জাতের ধান আবাদ হয়েছে। উফশী জাতের মধ্যে অন্যতম ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-৮১, ব্রিধান-৮৯, জিরাশাইল, খাটো-১০, কাটারীভোগ, শম্পা কাটারীসহ প্রায় ২৭ জাতের ধান রোপিত হয়েছে।

উপজেলা ভিত্তিক বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, রানীনগর উপজেলায় ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর, বদলগাছী উপজেলায় ১১ হাজার ৭৫০ হেক্টর, মহাদেবপুর উপজেলায় ২৮ হাজার ৪২০ হেক্টর, পত্নীতলা উপজেলায় ১৯ হজার ৬০০ হেক্টর, ধামইরহাট উপজেলায় ১৮ হাজার ৩২০ হেক্টর, সাপাহার উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর, পোরশা উপজেলায় ৮ সহাজার ২০০ হেক্টর, মান্দা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে।

জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। ধানের প্রতিটি ক্ষেতে উকি দিচ্ছে শীষ। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকের। কৃষকরা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার এবং পার্চিং ব্যবহার করছেন কেউ কেউ।
কৃষকরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া, নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বোরো ধানের চাষাবাদ ভালো হয়েছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন কদিন পরেই ধানের সবুজ চারা এবং কাঁচা শীষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষাণ-কৃষাণীর শূন্য গোলা। আর তাইতো বোরো এই রোরো ধানকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

রানীনগর উপজেলা মিরাট গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এবার ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি না হয়, তাহলে সুন্দরভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবো।
সদর উপজেলা শৈলগাছী গ্রামের কৃষক ইসমাইল বলেন, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। এবছর সার ও সেচের তেমন কোন সংকট হয়নি। যে কারণে ফসলের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। সবল-সতেজ চারাগুলো দেখে মনে হয় ধানের ব্যাপক ফলন হবে।

আরেক কৃষক ছমির উদ্দিন বলেন, এ বছর আমার ১২ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। ধানের দাম ভালো হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার দু’বিঘা জমি বেশি ধান চাষ করেছি। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তাহলে এ বছর ধানের ভালো ফলন পাবো আশা করছি। প্রতি বিঘায় অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি।

এখনও পর্যন্ত জেলায় কোথাও কোন পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। ইতোমধ্যেই ধান গাছে শীষ বেরুতে শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন বলে মনে করি।

আরবিসি/০৬ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category