আরবিসি ডেস্ক : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ভোগান্তি ও খরচ কমাতে দীর্ঘদিনের দাবির পর গত শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির আওতায় আসে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এক বছর না যেতেই সে আগ্রহে টান পড়েছে। এ বছর গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে দোটানায় রয়েছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ভুলত্রুটি সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ ভর্তিতে রাখার ব্যাপারে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে গুচ্ছ ভর্তির অনাগ্রহের পেছনে মূলত তিনটি কারণ পাওয়া গেছে। প্রথমত, এই ভর্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আর গুচ্ছে থাকা বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন্দ্রীয় ভর্তিতে রাজি নয়। কারণ তারা বেশি জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিতে চায়। এতে একই শিক্ষার্থী একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাচ্ছেন এবং তাঁকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াতে হচ্ছে। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার মেধাতালিকা প্রকাশ করেও গত শিক্ষাবর্ষে তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আগেই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করায় অনেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হচ্ছেন না।
তৃতীয়ত, বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গুচ্ছ ভর্তিতে না আসায় এই প্রক্রিয়ায় আগ্রহ কমছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির পরামর্শ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এখনো গুচ্ছে থাকার পক্ষে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও সিনিয়র শিক্ষকরা এ বছর থেকেই গুচ্ছে থাকার পক্ষে নয়।
গত রবিবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হয়েছে, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ভর্তীচ্ছুরা আরো বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। এ কারণে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। ’
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়কে গত বছর আটবার মেধাতালিকা প্রকাশ করে আসন পূর্ণ করতে হয়েছে। তাই এবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেতে চাইছেন না।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য করণীয় ঠিক করতে আমরা শিগগিরই বসব। কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ’
ইউজিসির সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে আগামী ৭ এপ্রিল আমরা ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বসব। ’
দেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ৫২ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তিতে এসেছে। সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি গুচ্ছে এবং চারটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে রয়েছে। কিছু বিশেষায়িত ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তারা নিজেদের মতো ভর্তি করছে।
আরবিসি/০৬ এপ্রিল/ রোজি